'তাঁর কাজ আমাদের উদ্দীপিত করবে'

প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে গতকাল ‘ওডিশার বিস্ময়’ অচ্যুত সামন্তর (বাঁয়ে) সঙ্গে সাক্ষাত্ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ । ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে গতকাল ‘ওডিশার বিস্ময়’ অচ্যুত সামন্তর (বাঁয়ে) সঙ্গে সাক্ষাত্ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ । ছবি: প্রথম আলো

‘দ্য গ্রেটম্যান’ বলে সহাস্যে অচ্যুত সামন্তর সঙ্গে হাত মেলালেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সেই হাত ধরা থাকল অনেকক্ষণ।
‘এত দিন শুধু অচ্যুত সামন্তর গল্প শুনেছি। পত্রিকায় পড়েছি। সামনাসামনি তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়াটা আমি মনে করি বড় ধরনের সৌভাগ্য। আমার মনে হয়, তাঁর কাজ আমাদের সবাইকে অনেক বেশি উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করবে।’ পরিচয়-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
গতকাল বুধবার প্রথম আলোর সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ওডিশার বিস্ময়’ অচ্যুত সামন্তর সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও সুধীজনেরা।
অচ্যুত সামন্ত উপস্থিত সুধীজনদের উদ্দেশে বলেন, ‘অনেক দেশে গিয়েছি। অনেক সম্মাননা পেয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো কোনোটাই নয়। বাংলাদেশে আপনাদের মতো বড় মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হতে পারাটা আমার জন্য বিরাট সম্মান।’
ওডিশার এই শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান তাঁকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের সঙ্গে অচ্যুত সামন্তর পরিচয় করিয়ে দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি ২০১২ সালের এপ্রিলে ভারতের ওডিশায় অচ্যুত সামন্তর গড়া কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি—কিট) ও কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কেআইএসএস—কিস) ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এরপর কিস ও কিটের বিপুল কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি করা একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
অচ্যুত সামন্ত বলেন, ‘নানাভাবে প্রায় ১০ লাখ লোকের অন্নসংস্থান হয় কিট ও কিস-এর মাধ্যমে। কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সে “কেজি টু পিজি” বিনা মূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন ২০ হাজারের বেশি দরিদ্র আদিবাসী শিক্ষার্থী। এটি এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আদিবাসী স্কুলের স্বীকৃতি পেয়েছে। দিল্লিসহ ভারতের বেশ কিছু শহরে কিস-এর শাখা চালু হয়েছে। ঢাকায়ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা কিস-এর আদলে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অচ্যুত সামন্তর মতো মানুষ সব দেশে ছড়িয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, গোলাম মুরশিদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, মাহ্ফুজ আনাম, নোমান খান, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, গোলাম রহমান, বদিউল আলম মজুমদার, রুশিদান ইসলাম, মালেকা বেগম, তাজিন আহমেদ, আসিফ নজরুল প্রমুখ।
প্রথম আলোতে সাক্ষাৎপর্ব শেষ করে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কিট) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন অচ্যুত সামন্ত।
আজ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আশুলিয়া ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন অচ্যুত সামন্ত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে দেওয়া হবে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সবুর খান বলেন, ‘অচ্যুত সামন্তর মতো একজন বড় মাপের মানুষকে ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেও এটি হবে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’
অচ্যুত সামন্তর জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ জানুয়ারি ভারতের ওডিশায়। ১৯৯২ সালে মাত্র ১২৫ জন ছাত্র নিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি। সেটি এখন ২০ হাজার শিক্ষার্থীর একটি বিশ্বমানের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। পরের বছর তিনি চালু করেন কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কিস)। এখানে বিনা মূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পান ২০ হাজারের বেশি দরিদ্র আদিবাসী শিক্ষার্থী।