এক মায়ের পাশে তরুণেরা

অসহায় মায়ের হাতে বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তরুণেরা।  ছবি: প্রথম আলো
অসহায় মায়ের হাতে বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তরুণেরা। ছবি: প্রথম আলো

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে বাড়িতে বেঁধে রেখে রোজ ফেরি করে গ্রামে গ্রামে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অসহায় মা মনোয়ারা বেগম (৫৫)। সেই অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়ালেন উপজেলার কয়েকজন তরুণ। গতকাল রোববার দুপুরে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মনোয়ারাকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করতে তাঁদের পক্ষ থেকে মুড়ি, চিড়া, গুড়, তেলসহ নানান সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

সবুজ শহর গড়তে ১৫ নভেম্বর শহরের সার্জেন্ট আহাত স্মৃতি প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উপজেলার চারটি সংগঠনের শতাধিক শিক্ষার্থী ছেলেমেয়ে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠান শেষে পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক তাঁদের চা-নাশতা করতে দুই হাজার টাকা দেন। সেই টাকা খরচ না করে গতকাল সেই টাকায় অসহায় নারীকে বিক্রি করতে নানা প্রকারের সামগ্রী কিনে দেওয়া হয়েছে।

ওই নারীর নাম মনোয়ারা বেগম (৫৫)। তিনি কর্মসংস্থানের জন্য সামান্য পুঁজিতে নানা সামগ্রী শহর থেকে কিনে গ্রামের বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। তাঁর স্বামী আবুল কাশেম ১৫ বছর আগে মারা যান। বাড়ি উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের গোজকুড়া গ্রামে। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তিন ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেলেও মনোয়ারা তাঁর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে (২০) নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন।

মনোয়ারার চার শতাংশ জমি থাকলেও সেখানে ঘর নির্মাণের আর্থিক সামর্থ্য নেই। ছেলেদের দেওয়া টিনের একটি চালাঘরে তিনি কোনো রকমে তাঁর অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে মেয়েকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে পা বেঁধে রেখে বাড়ি থেকে বের হন। সারা দিন কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে মেয়ের বাঁধন খুলে দেন। ভাত রান্না করে মা-মেয়ে খেয়ে শুয়ে পড়েন।

এভাবেই তাঁদের দিন চলে। গত শুক্রবার এই অসহায় মা ও প্রতিবন্ধী মেয়ের খবর পান স্বেচ্ছাসেবক দলের ছেলেমেয়েরা। তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন তাঁদের বাড়িতে যান। গতকাল মনোয়ারাকে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এনে তাঁর হাতে মুড়ি, চিড়া, গুড়, তেলসহ নানা সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

মনোয়ারা বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের এই সহযোগিতায় অনেক উপকার অইলো। যদি সরকারিভাবে একটা ঘর করে দেওয়া অইতো, তাইলে অসুস্থ মেয়েডারে লইয়া একটু ভালোভাবে থাকবার পাইতাম।’