পেঁয়াজ কেনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন

মহাখালীর সাততলা বস্তি এলাকার লালমাটি বাজারে আড়াই শ গ্রাম পেঁয়াজ কিনছেন এক ক্রেতা।  ছবি: প্রথম আলো
মহাখালীর সাততলা বস্তি এলাকার লালমাটি বাজারে আড়াই শ গ্রাম পেঁয়াজ কিনছেন এক ক্রেতা। ছবি: প্রথম আলো

পেঁয়াজের দাম রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এর প্রভাব দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের ওপরেও পড়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবটা বেশি।

ঢাকার বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস যে বস্তিগুলোতে, তার কয়েকটিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বস্তিবাসীরা পেঁয়াজ কেনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। বস্তিসংলগ্ন বাজারগুলোর বিক্রেতারাও বলছেন, বেশির ভাগ ক্রেতা একবারে ২৫০ গ্রামের বেশি পেঁয়াজ কিনছেন না। ১০০ গ্রাম পেঁয়াজের ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। এসব বিবেচনায় অনেক বিক্রেতা দোকানে পেঁয়াজ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন।

গতকাল সোমবার মিরপুরের ভাষানটেক বস্তিসংলগ্ন বাজার, তেজগাঁওয়ের মধ্য বেগুনবাড়ির বউবাজার, মহাখালীর সাততলা বস্তিসংলগ্ন লালমাটি বাজার ও কড়াইল বস্তির একটা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ কেনার দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ কম। বাজারগুলোতে এদিন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম হাঁকা হচ্ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

এদিন সকালে ভাষানটেক বাজারে কথা হয় ফিরোজা বেগম নামের এক ষাটোর্ধ্ব নারীর সঙ্গে। একটা দোকানে নতুন আলুর দরদাম করে ৩০ টাকা দিয়ে এক কেজি পুরোনো আলু কেনেন তিনি। হাতে সবজির ব্যাগ। পেঁয়াজ কিনবেন না?—এমন প্রশ্নের জবাবে পরিহাসের ছলে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ খাইতাম না। পেঁয়াজ না খাইলে কী হয়?’

মনোয়ারা বেগম নামের আরেক নারী তেজগাঁওয়ের মধ্য বেগুনবাড়ির এক বস্তিতে শ্রমজীবী তিন ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। সাধারণত মাসের চালটা একবারে কিনে রাখার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া তেল–ডাল–সবজি, মাছ আনাজপাতিসহ রান্নার অন্যান্য উপকরণ প্রতিদিন কেনেন। এদিন দুপুরে তিনি বলেন, ‘আমার বড় পোলার দিনে বেতন (মজুরি) ৩০০ ট্যাকা। আর এক কেজি পেঁয়াজের দাম আইজকা ২২০ ট্যাকা। পোলার দিনের বেতনের সমান যদি এক কেজি পেঁয়াজের দাম হয়, তাইলে তা কেমনে খাই?’

মনোয়ারা বেগম যে দোকান থেকে সদাইপাতি করছিলেন, তার সামনে ছোট ছোট পলিথিনের প্যাকেটে রাখা ছিল দুই ধরনের ডাল, লবণ, ছোলা। টুকরিতে কিছু আদা–রসুনও দেখা যায়। কিন্তু সেখানে কোনো পেঁয়াজ ছিল না। জানতে চাইলে দোকানমালিক আবুল হোসেন বলেন, ‘আইজকাও কারওয়ান বাজারে এক পাল্লা পিঁয়াজ বিক্রি হইছে এগারো শ ট্যাকা কইরা। এত ট্যাকা দিয়া পিঁয়াজ কিইন্যা যদি শেষ পর্যন্ত বিক্রি না হয়, তাই আনি নাই।’

এখান থেকে মহাখালীর সাততলা বস্তির লালমাটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে ঢুকে ডান পাশে অন্তত চারটি পেঁয়াজ–রসুনের দোকান। এখানে ভিড় খুবই কম। কেউ কেউ এসে দুই–একটা পেঁয়াজ নাড়াচাড়া করে দাম জানার পর ফিরে যাচ্ছেন। দোকানদারেরা সবাই জানান, লোকে এখন এক শ গ্রাম থেকে শুরু করে বড়জোর আড়াই শ গ্রাম পেঁয়াজ কিনছেন। অনেকে কিনছেনই না।

এই বাজারের আবদুর রব নামের এক দোকানদারের ভাষ্য, ‘লোকে এখন পারলে পেঁয়াজ কিনেই না। একবার আড়াই শ গ্রাম পেঁয়াজ কিনলে, আবার কিনতে আসে চাইর–পাঁচ দিন পর।’

আবদুর রবের সঙ্গে কথোপকথনের সময় সেখানে হাজির হন খোকন আলী ও মিরাজুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি। জানালেন, সাততলা বস্তি এলাকার এক মেসে তাঁরা একসঙ্গে ১০ জন থাকেন। এই দুই যুবক আবদুর রবের কাছ থেকে আড়াই শ গ্রাম দেশি পেঁয়াজ কেনেন ৫৫ টাকায়। মাপার পর দেখা যায় মোট আটটা ছোট আকারের পেঁয়াজ উঠেছে। তাঁরা বলেন, এই পেঁয়াজ দিয়েই তাঁদের চার দিন চালিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন পেঁয়াজের বরাদ্দ দুটি।