দুই দলেই দক্ষিণ সিটির প্রার্থী নিয়ে আলোচনা

জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের মাথায় দেশের মর্যাদাপূর্ণ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আসন্ন। মূল লড়াইটা এবারও নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে। তবে এই লড়াই কতটা জমবে, মেয়র পদে কারা দুই দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন—এখন পর্যন্ত ভোটের আলোচনা এসবের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। 

বর্তমানে দুই সিটিরই মেয়র আওয়ামী লীগের। দক্ষিণে সাঈদ খোকন এবং উত্তরে আতিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কৌতূহল—মেয়র পদে পুরোনোদের রেখে দেওয়া হবে নাকি পরিবর্তন আসছে? এর মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ধানমন্ডি এলাকার সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে দলীয় ফরম সংগ্রহ করার পর আলোচনায় হাওয়া লেগেছে। সে তুলনায় উত্তরে প্রার্থী নিয়ে উত্তাপ নেই। আতিকুল ইসলামই থাকছেন।

অন্যদিকে নানা সংশয়, সন্দেহ সত্ত্বেও বিএনপি ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হলেও প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত বলেই দলের সূত্রগুলো বলছে। এ ক্ষেত্রে উত্তরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালই মূল বিবেচনায়। তিনি ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রয়াত আনিসুল হকের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। অবশ্য সেই নির্বাচন তিনি দুপুরের আগেই বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার তিনি ছাড়াও বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তিনি ২০১৫ সালেও মনোনয়ন চেয়ে পাননি। সেবার দক্ষিণে প্রার্থী করা হয়েছিল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। এবার দক্ষিণে অবিভক্ত ঢাকা সিটির প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলে আলোচনা আছে। 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ আগামী ৩০ জানুয়ারি। সরকারি দল আওয়ামী লীগ গত বুধবার থেকে মেয়র পদে এবং গতকাল থেকে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। চলবে আজ শুক্রবার পর্যন্ত। বিএনপি গত বুধবার থেকে কাউন্সিলর এবং গতকাল থেকে মেয়র পদে দলীয় ফরম বিক্রি শুরু করেছে, আজও চলবে। এর বাইরে জাতীয় পার্টিও মাঠে আছে। 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, এ নির্বাচনে জয় ছাড়া কিছু ভাবছে না সরকারি দল। জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। রংপুরে মিত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়। ফলে এটাকে খুব একটা আমলে নেননি দলটির নেতারা। একমাত্র সিলেটে বিএনপির কাছে হেরেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকায় বিএনপির কাছে পরাজয় এড়াতে সব চেষ্টাই করবে আওয়ামী লীগ। 

>
  • তাপসের পর সাঈদ খোকনও ফরম কিনলেন
  • বিএনপিতে ফরম সংগ্রহ খোকার ছেলের
  • জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের মাথায় নৌকা ও ধানের শীষের মর্যাদার লড়াই
  • নির্বাচন কেমন হবে, সেই চিন্তা বিএনপির
  • কাউন্সিলর পদে দলীয়ভাবে প্রার্থী ঠিক না করে উন্মুক্ত রাখার ভাবনা আ.লীগের

আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক রয়েছে। দুই সিটির দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হবে। তবে কাউন্সিলর পদে দলীয়ভাবে প্রার্থী ঠিক না করে উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা আছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, জয়ের ধারা বজায় রাখার মতোই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রত্যেক প্রার্থী সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। কে প্রার্থী হবেন, সেটা আলোচনা করেই ঠিক করবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। 

বিএনপির ভাবনা
জয়-পরাজয়ের চেয়ে নির্বাচনটা কেমন হবে, বিএনপির মধ্যে সেই ভাবনাই বেশি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচন ও এর আগের সিটি নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের দেওয়া গত বুধবারের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট। এরপরও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, কর্মীদের চাঙা করা, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ী হয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করা এবং জোর করে হারিয়ে দিলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের স্বরূপ উন্মোচন করা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, এটা প্রমাণিত। এবারও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগ্রহীরা ফরম সংগ্রহ করছেন। দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থী ঠিক করা হবে। 

 আ.লীগে পরিবর্তনের ইঙ্গিত
এখন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এঁরা হলেন সাঈদ খোকন, সাংসদ ফজলে নূর তাপস ও সাংসদ মো. সেলিম। উত্তরে আলোচিত প্রার্থী একজনই, বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

আতিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী নেতা। প্রয়াত আনিসুল হকের মৃত্যুর পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে তিনি মেয়র হন। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। গতকাল আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মেয়র হওয়ার পর থেকেই কাজ করছেন। দলের মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। পেলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন।

দক্ষিণ সিটির বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ফজলে নূর তাপসের পক্ষে দলীয় ফরম নেওয়াটাও একটা ইঙ্গিত বহন করে। কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। কোনো ইঙ্গিত ছাড়া কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত না করে তাঁর ফরম সংগ্রহ করার কথা না। এ ক্ষেত্রে তাপসের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন দলের নেতারা। এ ছাড়া দক্ষিণে দলীয় কোন্দল বেশি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সদস্য তাপস প্রার্থী হলে দলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন, এমনটাও ভাবনায় আছে দলীয় নেতাদের। 

তবে আরেক নেতা বলেন, দক্ষিণ সিটির রাজনীতি ও ভোটের সমীকরণ পুরান ঢাকার ওপর নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার প্রার্থীরা কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়ে থাকেন। এমনকি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র পদেও বেশির ভাগ সময়ই পুরান ঢাকার প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পুরান ঢাকার বাইরের কাউকে প্রার্থী করা হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় কি না, সেই ভাবনাও আছে দলে। 

গতকাল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজেই আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। আজ পিতা নেই। পিতার অবর্তমানে আমার অভিভাবক আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন। আজ আমার কঠিন সময়। ঢাকাবাসী ও দেশবাসীর দোয়া চাই।’