ঢাকায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খুনে ৭ জনকে শনাক্ত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর শান্তিনিকেতনে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন (৭০) হত্যায় সাতজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে পাঁচজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়। পুলিশ বলেছে, শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গত বুধবার ভোরে চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত শান্তিনিকেতনে তোবারকের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের ডোরবেল বাজায়। তারা বাসায় ঢুকে তোবারকের মাথা, কপাল, চোয়াল ও হাতে কোপ দেয়। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় সামান্য আহত তাঁর কর্মচারী সাইফুল ইসলাম ও বাড়ির দুই নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

তোবারক হোসেন হত্যা মামলা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (পশ্চিম-ডিবি) ছায়া তদন্ত করছে।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা (রাসেল) গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে টাকা লুট করতেই তোবারককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া সাতজনকে গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অন্য আরও অন্য কোনো কারণ ছিল কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে।

ব্যবসায়ী তোবারকের স্ত্রী পারভীন ইসমত আরা প্রথম আলোকে বলেন, তোবারক হোসেন মহাখালী মামা প্লাজা নামের একটি ছয়তলা মার্কেটের মালিক ছিলেন। ওই মার্কেট থেকে প্রত্যেক মাসে পাঁচ লাখ টাকা আয় হতো। ওই টাকা তিনি ব্যাংকে না রেখে বাসায় রাখতেন। বাসায় মার্কেটের কর্মচারী ও ভক্তরা আসতেন। তাঁদের কেউ কেউ বাসায়ও থাকতেন। তাঁদের মধ্যে হয়তো অর্থের লোভ জাগে।

ইসমত আরা জানান, সংসার-সন্তান ছেড়ে মার্কেটের লোকদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় স্বামীর (তোবারক হোসেন) সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হতো। পরে ২০১৭ সালে তিনি বড় মেয়ের সঙ্গে মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে স্বামীর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর সহকারী সেবাশুশ্রূষা করে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছিলেন। সাইফুল তাঁর স্বামীর বাসায়ই থাকতেন। সাইফুল টাকাপয়সা নয়ছয় করতেন। সম্প্রতি তিনি সাইফুলকে বাদ দিয়ে দিতেও চেয়েছিলেন। এতে সাইফুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পাঁচ দিন আগে হাসান নামের একজনকে মার্কেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, হাসানকে নিয়েই সাইফুল তাঁর স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

আলামত জব্দ করার পর সিআইডির কর্মকর্তা গোবিন্দ দাস প্রথম আলোকে বলছিলেন, তোবারকের হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি ছুরি উদ্ধার হয়েছে। এগুলো কেনার রসিদ পাওয়া গেছে সাইফুলের পকেটে। এ ছাড়া খুনিদের ফেলে যাওয়া একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তোবারকের কর্মচারী হাসান ঘটনার পর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ফোন করে তোবারককে কোপানোর কথা জানিয়ে বলেন, তাঁকেও হামলাকারীরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হাসান পালিয়ে যান। পুলিশের ধারণা, হাসানই মূল পরিল্পনাকারী।

মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ডিবির পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন (সুমা) প্রথম আলোকে বলেন, হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। তাঁরা নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ রাখেন।

গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁর একমাত্র ছেলে শাহাদত হোসেন ঢাকায় আসেন। এরপর তোবারকের মৃতদেহ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের চরপাড়ায় নেওয়া হয়।