তাপস ও আতিকুলের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত

শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।
শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে—বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন নাকি সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস? এর আনুষ্ঠানিক উত্তর আজই জানা যাবে। তবে উত্তরের প্রার্থী নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামই মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে উত্তর–দক্ষিণ দুই সিটিতেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেছে। উত্তরে তাবিথ আউয়াল আর দক্ষিণে ইশরাক হোসেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, শেখ ফজলে নূর ও আতিকুল ইসলামের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত, শুধু ঘোষণা বাকি। গতকাল রাতে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে শেখ ফজলে নূর ও আতিকুল ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

তবে রাত ১১টায় সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের সূচনা করতে পেরেছি। কাজে ভুল থাকতেই পারে। জনগণ সব বিবেচনা করবে।’

গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বিচার–বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নানা মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। সবকিছু বিচার–বিশ্লেষণ করতে একটু সময় লাগছে।

এর আগে ২৫ ডিসেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে উত্তাপ ছড়ান ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যসচিব শেখ ফজলে নূর। পরিবর্তনের আভাস ছড়িয়ে পড়ে ওই দিনই। তৈরি হয় আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের বাদ পড়ার গুঞ্জন। এর মধ্যেও দুই দফায় সাঈদ খোকনের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।

এদিকে গতকাল সকালে গ্রিন রোডে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ ফজলে নূর। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী সরকারদলীয় এই সাংসদ বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে তিন মাসের মধ্যে দেশের খ্যাতনামা নগরবিদদের নিয়ে মহাপরিকল্পনা তৈরি করবেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে নূর। তিনি ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ হিসেবে গত তিন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর বড় ভাই শেখ ফজলে শামস গত ২৩ নভেম্বর যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে শেখ ফজলে নূর বলেন, মেয়র নির্বাচনে আসার ইচ্ছে আগে ছিল না। কিন্তু সাংসদ হিসেবে এলাকার কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যা চোখে পড়েছে। এতেই বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জায়গাটায় অনেক ফারাক রয়ে গেছে। তাই সিটি করপোরেশনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয়েছে।

শেখ ফজলে নূরের প্রার্থিতার মধ্য দিয়ে ঢাকা দক্ষিণে নতুন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দক্ষিণ সিটির অধিকাংশ এলাকা পুরান ঢাকা হিসেবে খ্যাত। ঢাকা ভাগ হওয়ার আগে শহরের প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা। এরপর বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাদেক হোসেন খোকাও পুরান ঢাকার। ঢাকা বিভক্ত হওয়ার পর এই এলাকার মেয়র হন মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। এবারও বিএনপির প্রার্থী পুরান ঢাকারই, সাদেক হোসেনের বড় ছেলে ইশরাক।

ভোটে নেমেও শঙ্কায় বিএনপি
নির্বাচনে নামলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছে বিএনপি। দলের দুই প্রার্থীও এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমের কাছে। এর আগে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনেও দুপুরের মধ্যেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। গতকাল রাতে মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু হতে পারে না। আমরা যেহেতু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, নির্বাচনে বিশ্বাস করি, বিকল্প কোনো পথ নেই। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় যেতে হবে।’

সাঈদ খোকন, শেখ ফজলে নূর তাপস, আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন
সাঈদ খোকন, শেখ ফজলে নূর তাপস, আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন

ঢাকা দক্ষিণে আগেরবার বিএনপির প্রার্থী ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। যদিও তাঁর পক্ষ হয়ে ভোটের প্রচারে ছিলেন স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। এবার তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না। এককভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন।

মনোনয়ন পেয়ে গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় ইশরাক সাংবাদিকদের বলেন, দুই সিটির উন্নয়নে ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। ১০০ বছরের মহাপরিকল্পনা ইশতেহারে রাখা হবে। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।

কাউন্সিলর পদেও দলীয় মনোনয়ন
মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদে এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন ফরম দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল। যদিও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তবু দই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিবেচনায় নিয়েই একক প্রার্থী দিচ্ছে দলগুলো।

আগামী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটিতে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ইভিএম পরিচালনায় প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে সেনাসদস্য থাকবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার বিষয়টি প্রচার করবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আর আন্দোলনের অংশ হিসেবেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নামার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

উত্তরে পুরোনো প্রার্থীর নতুন লড়াই
ঢাকা উত্তরের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন। আর দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপির মেয়র প্রার্থী হলেন তাবিথ আউয়াল। ঢাকা উত্তরের গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আনিসুল হক। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হন আতিকুল ইসলাম। আর ওই উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী পুরোনো হলেও লড়াই হবে প্রথমবারের মতো।

মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাসযোগ্য শহর গড়তে কাজ করে যাবেন।

মনোনয়ন পাওয়ার পর তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, শহরের মানুষ এখন বায়ুদূষণ, ডেঙ্গু, জলাবদ্ধতার আতঙ্কে আছেন। পরিচ্ছন্ন নগর, গণপরিবহনের উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত আজ
মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামও আজ ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য তিনটি কমিটি করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের নেতৃত্বে আজ রোববার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে দক্ষিণের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। আর গুলশানে অনুষ্ঠিত চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উত্তরের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বাধীন কমিটি। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। সাক্ষাৎকার শেষে রাতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।

৩১ ডিসেম্বর দুই সিটির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি।