'বাবারা ঘরে যান, পরিবার বাঁচান'

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন জনগণকে ঘরে ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের বটতলা এলাকা। ছবি: তৌহিদী হাসান
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন জনগণকে ঘরে ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের বটতলা এলাকা। ছবি: তৌহিদী হাসান

'বাবারা ঘরে যান, পরিবারকে বাঁচান। জীবনে বেঁচে থাকলে বহু ব্যবসা করতে পারবেন। টাকা রোজগার করতে পারবেন।'সরকারি নির্দেশ অমাণ্য করে পণ্য বিক্রি করা দুজনের প্রতি এ আহ্বান জানাচ্ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আসলাম হোসেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো প্রতিবেদক।

জেলা প্রশাসন থেকে গত বৃহস্পতিবার গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত বিকেল তিনটার পর জেলার কোথাও ওষুধের দোকান ছাড়া কোনো দোকান খোলা রাখা যাবে না। এমন বিজ্ঞপ্তি উপজেলা প্রশাসন, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা প্রত্যেক গ্রামে মাইকে প্রচার করেন।

এরপর গত শুক্রবার থেকে জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে। ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও বিকাল তিনটার পরে ওষুধ ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অভিযান চলে।

গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আসলাম হোসেনের সঙ্গে অভিযানে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ছিলেন।

অভিযানের সময় দেখা যায়, সমরেশ সাহা ও বাদল সাহা দুই ভাই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় গ্রামের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন। বিকেল তিনটার পর পণ্য বিক্রি করার দায়ে সমরেশ সাহাকে ২৫০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। কিন্তু সমরেশের কাছে ছিল ৫০ টাকা। বাকি দুই শ টাকা জেলা প্রশাসক নিজের পকেট থেকে দিয়ে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে দেন। পরে সমরেশের হাতে ত্রানসামগ্রী (চাল,ডাল,তেল) তুলে দেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে দুই ভাই স্বীকার করেন, তাঁরা মাইকে তিনটার পর বাজারে থাকা যাবে না বলে প্রচার শুনেছেন। জেলা প্রশাসক তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন,'বাবারা ঘরে যান, পরিবারকে বাঁচান। জীবনে বেঁচে থাকলে বহু ব্যবসা করতে পারবেন। টাকা রোজগার করতে পারবেন।'

এর আগে সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নে তাহেরমোড়ে বিকেল পাঁচটার দিকে তিনটা চায়ের দোকানে লোক সমাগম করে আড্ডা দিতে দেখা যায়। প্রশাসনের গাড়ি দেখে অনেকে দৌড়ে পালান।

চায়ের দোকান বন্ধ করে দিয়ে জেলা প্রশাসক তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'এভাবে দৌড় দিলে কি করোনাভাইরাস ছেড়ে পালাবে। কাছাকাছি থাকলে করোনাভাইরাস ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই চায়ের দোকানে আড্ডা না দিয়ে ঘরে থাকেন। নিজেরা বাঁচুন, অন্যদেরও বাঁচান।'

এভাবে সদর উপজেলার বটতৈল বাজার, মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ, হালসা, কুর্শা, মালিহাদ, আমলা, মশানবাজার, মিরপুর বাজার ঘুরে ঘুরে দেখেন জেলা প্রশাসক। এসময় তাঁর সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন।

জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ অভিযান প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চালানো হবে। জনগণকে সচেতন করতে ঘরে ফেরাতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।