ভৈরবে করোনা সংক্রমণের উৎস এখনো অজানা
হটস্পট ঘোষিত জেলা কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলার মধ্যে সংক্রমণের হিসাবে ভৈরব শীর্ষে। ঝুঁকির তালিকায়ও এগিয়ে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ মনে করছে, ভৈরবে এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তবে এখন পর্যন্ত এই সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি।
গত বুধবার পর্যন্ত ভৈরব থেকে ২০৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫৯ জনের পরীক্ষা ফল জানা গেছে। এর মধ্যে ৩৫ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ জনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই সংখ্যার মধ্যে আটজন চিকিৎসকসহ ১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী, নয়জন পুলিশের এবং একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ দুজন উপজেলা প্রশাসনের। পাঁচজন স্থানীয় বাসিন্দা।
৩৫ জনের মধ্যে একজন ছাড়া অন্যরা কোনো না কোনোভাবে একে অপরের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে ধারণা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য কিংবা ধারণা নেই করোনা প্রতিরোধ কমিটির কাছে। এই নিয়ে বিভাগটি এখনো গোলক ধাঁধার মধ্যে রয়ে গেছে।
করোনা প্রতিরোধ কমিটি সূত্র জানায়, তাদের ধারণা যে ভৈরবে ব্যাপকভাবে সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। যখন গণহারে নমুনা সংগ্রহ শুরু হবে তখন হয়তো আঁতকে ওঠার মতো চিত্র উঠে আসতে পারে। সেই কারণে শুরু থেকেই সংক্রমণের উৎস খুঁজছিলেন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা। এই ক্ষেত্রে তাঁরা সুনির্দিষ্ট করে উৎসের সন্ধান করতে পারেননি। বিশেষ করে সম্প্রতি প্রবাস থেকে আসা সহস্রাধিক লোকজনের শরীরে সংক্রমণ রয়েছে কিনা কিংবা সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে প্রবাসীদের ভূমিকা কতটুকু—এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই করোনা প্রতিরোধ কমিটির কাছে। কারণ এখন পর্যন্ত একজন প্রবাসীরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, প্রবাসী কিংবা তাদের পরিবারের কারও মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনার উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই ভালো আছেন।
একই সূত্র জানায়, প্রবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ভাবার তেমন সুযোগ পাওয়া যায়নি। কারণ ভৈরবে সংক্রমণের সূচনাটি হয় পুলিশ সদস্য দিয়ে। এরপর প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন থেকে বের হয়ে আসা যায়নি। এই কারণে সামাজিক ও প্রবাসী সংক্রমণের বিষয়ে এবং উৎস নিয়ে গোলক ধাঁধায় পড়ে আছে কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বেশির ভাগই হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষ করেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কারও সমস্যা আছে এমন লোক পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের সদস্যরাও মন্দ আছে মনে হচ্ছে না।
এই ক্ষেত্রে ইউএনও মনে করেন, যেহেতু প্রবাসী কিংবা তাঁদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ আসা পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে না, সে কারণে ভৈরবে ব্যাপক সংক্রমণের পেছনে অন্য কোনো বড় কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে।
ভৈরব বন্দর ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক জনপদ। এখানকার বাণিজ্যের বড় একটি অংশ নদীপথ কেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের আমদানি নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে হয় এবং নদী পথে। প্রতিদিন জনপদ জেগে ওঠার আগেই নদীঘাটে অসংখ্য ব্যবসায়ী ব্যবসার কাজটি সেরে ফেলছেন। এখানকার করোনা ঝুঁকির পেছনে এই দিকটি বড় একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ইউএনও।
গত বুধবার ও মঙ্গলবার মুঠোফোনে বেশ কয়েকজন প্রবাস থেকে আসা ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে সুস্থ আছেন বলে জানান। বিশেষ করে তাঁরা কেউ এই মুহূর্তে শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছেন না। পরিবারের সদস্যরাও ঠিক আছেন।
প্রবাসীদের মধ্যে থেকে কারও শরীরে এই মুহূর্তে করোনা উপসর্গ দৃশ্যমান না থাকার তথ্যে
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদও বিস্মিত। তাঁর মনেও প্রশ্ন প্রবাসীরা ভালো থাকলে ভৈরবটা এত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল কীভাবে? তাঁর আশঙ্কা, ভৈরবে করোনার ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণ হয়ে গেছে। নমুনা নেওয়া শুরু হলে টের পাওয়া যাবে। দ্রুত সংক্রমণের উৎস বের করে করে প্রতিরোধে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করেন বুলবুল আহমেদ।