মহামারির মধ্যেও হামলার শিকার সাংবাদিকেরা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) বলছে, করোনা মহামারির এই সময়ে তথ্যপ্রবাহের ওপর কোথাও কোথাও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। এই সময়ে শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকিতে থাকা সাংবাদিকেরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। কোথাও কোথাও গণমাধ্যমগুলো কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউনেসকো গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার যেসব ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে, সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। আর এই প্রেক্ষাপটে আজ ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদ্‌যাপিত হচ্ছে। এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য—ভয়ভীতি ও তোষণহীন সাংবাদিকতা।

মহামারির এই সময়ে গত মার্চ ও এপ্রিলজুড়ে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ এপ্রিল রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারিতে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও হয়রানির একটি খতিয়ান তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ মার্চ জরুরি ছুটি শুরুর পর বাংলাদেশে মূলত ত্রাণ তছরুপের সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশের জের ধরে অন্তত নয়জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ছয়জনের বিরুদ্ধে।

>আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
ত্রাণ তছরুপের সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।

এর বাইরে প্রথম আলোর নরসিংদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নরসিংদীতে পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার। অভিযোগকারী ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলমের দাবি, তাঁর সঙ্গে কথা না বলেই ওই তিন সাংবাদিক তাঁকে উদ্ধৃত করে মন্তব্য ছেপেছেন।

চলমান দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে নরসিংদী, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, নড়াইলসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। শনিবার এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শুধু হামলা-মামলাই নয়, অবাধ তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টির চেষ্টাও ছিল। গত ২৫ মার্চ গণমাধ্যমগুলো নজরদারিসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয় তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে, যদিও সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়।

মহামারির সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, কোভিড-১৯ দ্বিতীয় এক মহামারির জন্ম দিয়েছে, তা হলো ভুল তথ্যের। তাঁর মতে, এই মহামারি রোধের দাওয়াই হলো মূলধারার সংবাদমাধ্যম, যার কাজ সত্যতা যাচাই করে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেওয়া।

এদিকে ইতালির ব্রুনো কেসলার ফাউন্ডেশনের জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউনেসকো বলছে, এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৬৪ ভাষায় ১১২ মিলিয়ন পোস্ট দেওয়া হয়, যার ৪০ শতাংশই অনির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া। তাই বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পেতে অনেকেই এখন মূলধারার গণমাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন।

তথ্য কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে কোনো অবস্থাতেই যেন তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা না হয়। এতে করে গুজব ও ভুল তথ্য ছড়ায়। কিন্তু মহামারির এই সময়েও বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার–নির্যাতন হচ্ছে। কোথাও কোথাও গণমাধ্যম কার্যালয় বা সাংবাদিকদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো মূলধারার সংবাদপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।’