চট্টগ্রামে হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন সীমিতসংখ্যক রোগী

কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ার কারণে চট্টগ্রামে সংকুচিত হয় আসছে চিকিৎসাসেবা। পর্যাপ্ত হাসপাতাল ও শয্যার অভাব এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংকটই এর মূল কারণ বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ শুধু হাসপাতালে জায়গা পেয়েছেন। বাকি রোগীরা ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অবশ্য সচ্ছল পরিবারের কিছু রোগী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছেন, যার সংখ্যা খুবই কম।

চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এরই মধ্যে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ইপিজেডে কাজ করছেন আড়াই লাখের বেশি শ্রমিক। সব মিলিয়ে আগামী ১০-১২ দিনে করোনার বিস্তার আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু চিকিৎসার যে প্রস্তুতি, তাতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর জায়গা হবে না।

সংকটের মধ্যে প্রস্তুতি কী জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মোট শনাক্তের ১০ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। চট্টগ্রামে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব প্রকট। কিন্তু ঢাকার পরেই চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা বেশি। কিছুদিন পর নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়ানো হবে। তখন রোগী আরও বাড়বে।’

রোগী ও চিকিৎসার সুযোগ

চট্টগ্রামে গতকাল বুধবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৯৪ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামসহ বিভাগের ১১ জেলায় শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৬৯ জন রোগী। আর চট্টগ্রামে মারা গেছেন ৮৩ জন এবং বিভাগে এই সংখ্যা ১৮২। বর্তমানে যেখানে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, সেখানে সুস্থ হয় ওঠার সংখ্যা অনেক কম। মঙ্গলবার ছয়জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ২৪৮ এবং চট্টগ্রামসহ বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২৯ জন।

চট্টগ্রামে জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতাল এবং ফিল্ড হাসপাতালে প্রায় সোয়া ৩০০ কোভিড রোগীর চিকিৎসা চলছে, যা মোট রোগীর ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। এই চারটি হাসপাতালে একটি শয্যাও খালি নেই। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কিছু করোনা রোগী আছে। অন্য জেলা থেকেও গুরুতর অসুস্থ রোগীরা চট্টগ্রামে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান। কিন্তু কোথাও শয্যা খালি নেই।

এর মধ্যে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে এবং হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ ১৭০ রোগী চিকিৎসা নিতে পারবেন। গতকাল পর্যন্ত রেলওয়ে হাসপাতালে ৪২ এবং হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৬ জন রোগী ভর্তি হন। হলি ক্রিসেন্টে ১০টি আইসিইউ এবং ৮টি এইচডিইউ শয্যা থাকলেও দক্ষ জনবলের অভাবে এই মুহূর্তে তা চালু করা যাচ্ছে না।

>চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ শুধু হাসপাতালে জায়গা পেয়েছেন। বাকি রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন ঘরে।

সার্বিক অবস্থায় চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৩টির মধ্যে ১১টি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। সরকারি নির্দেশ মেনে হাসপাতালের মালিকেরা কিছু কিছু রোগী ভর্তি করেছেন। তবে ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে এখনো রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগী ভর্তি তদারক করতে সরকার সাত সদস্যের ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছে।

সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘হালিশহরে একটি কমিউনিটি সেন্টার নেওয়া হয়েছে। সেখানে ৩০০ রোগীকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রাখতে চাই। পর্যায়ক্রমে আরও কমিউনিটি সেন্টার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

পরামর্শ

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফয়সল ইকবাল চৌধুরী চট্টগ্রামে বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য অধিগ্রহণ করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শনাক্তের ১০ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ৯০ শতাংশ বাসায় থাকবে। কিন্তু ১০ শতাংশ রোগীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ মনে করেন, ‘আগামী এক মাস পর কী পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে, তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকাজ এখনই শুরু করা দরকার। কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এ কারণে রোগীর চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেশির ভাগ রোগী। এটা সত্যি দুঃখজনক।’