অনিশ্চয়তার মধ্যে আশার আলো

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

সেদিন প্রথম আলোতে পড়লাম, দেশে করোনায় ৫০০ জন যেখানে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৯ দিনে, সেখানে পরবর্তী ৫০০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন মাত্র ১৬ দিনে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি কি তাহলে চার্লস ডারউইনের 'Survival of the fittest' মতবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! এ অবস্থায় যদি করোনায় আমার আপনজন কিংবা আমি… এই আতঙ্কে রোজ সকালে ঘুম ভাঙে। তারপর বাইরে পাখির ডাক শুনে নিজেকে খুব লাকি মনে হয়। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে করোনা কালে বেঁচে আছি, সুস্থ আছি। এভাবেই হয় প্রতিটি দিনের শুরু।

গত ১৯ মার্চ কলেজ থেকে পরীক্ষার প্রবেশ পত্র পেয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে এখনো পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়া হলো না। প্রায় ১৩ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থী আমরা জানি না পরীক্ষা ঠিক কবে হবে। বাবা-মা প্রায়ই বলেন, পরীক্ষার রুটিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যেকোনো সময় দিয়ে দিতে পারে। তাই পড়ালেখায় যেন কোনো ঢিল না দিই। কলেজ থেকেও সেটাই বলা হয়েছে। পড়ালেখা তাই চলছে পূর্বের গতিতেই। এইচএসসি পরীক্ষার পর হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। করোনার কারণে সবকিছু অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এমনকি করোনাকালে কাজ হারানো খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোর দুই বেলা দুমুঠো খাবার জোটানো নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রতিদিন বেলা আড়াইটায় বাবা-মা, আমার ছোট ভাই আর আমি টিভি সেটের সামনে বসি করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন দেখার জন্য। বলা যায়, এটি আমাদের প্রাত্যহিক রুটিনে পরিণত হয়েছে। তবে, আজকাল টেলিভিশন দেখতে কিংবা অনলাইনে পত্রিকা পড়তে একদম ভালো লাগে না। সব খবরেই যেন করোনার ছোঁয়া। করোনা বাদে রয়েছে আমাদের দেশের বজেট, লিবিয়ায় মানব পাচার এবং আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের খবর। সাধারণ ছুটি উঠে যাওয়ার পর মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানা না–মানার খবরও দেখা যায়। করোনাকালে শোনা যায় মানবিকতা ও অমানবিকতার খবর। কেউ জীবন বাজি রেখে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন, আবার কেউ করোনার ভয়ে নিজের মাকে ফেলে দিয়েছেন জঙ্গলে।
এই দীর্ঘ অবসরে কোথাও পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়েছে, তো কোথাও দেখা দিয়েছে পারিবারিক সহিংসতা। একজন এই সময়টা কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করছে আবার একজন গৃহবন্দী জীবনে মানসিক অবসাদে ভুগছে। যাই হোক, আমাদের চারপাশের প্রকৃতি কিন্তু মহাসুখে আছে। নিজেকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে প্রকৃতি ভীষণ ব্যস্ত। বায়ুদূষণ অনেকটা কমে গিয়েছে। এখন নিশ্চয়ই ঢাকা দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ১ নম্বরে নেই।

করোনা মহামারি হয়তো একদিন নির্মূল হয়ে ঠাঁই নেবে পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু করোনায় মৃত্যুর মিছিলে শামিল হওয়া মানুষগুলো আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না আমাদের মাঝে। তাদের শেষযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধির কারণে অনেক সময় স্বজনেরা পাশে থাকতে পারেন না। সেই স্বজনদের আমরা শুধু সমবেদনাই জানাতে পারি। আসলে যার যায় সে–ই বোঝে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ঠিক কতখানি।

করোনাকালে বেঁচে থাকতে শত অনিশ্চয়তার মধ্যে খুঁজে নিতে হয় আশার আলো। আমাদের দেশের সরকার এবং সম্মুখযোদ্ধারা করোনা মহামারি মোকাবিলার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতনতার মাধ্যমেই হবে করোনাযুদ্ধে জয়। আশা তো করাই যায়, একদিন সেই স্বপ্নের ভোর আসবে, যেদিন করোনা নিয়ে আর কোনো আতঙ্ক থাকবে না। প্রিয় বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব হবে করোনামুক্ত। পৃথিবী ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক ছন্দ।

*এইচএসসি পরীক্ষার্থী, হলি ক্রস কলেজ, তেজগাঁও, ঢাকা। [email protected]