তারাগঞ্জে ধানের পর আলুতেও লাভ কৃষকের

আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এবারে অনেক চাষি আলুর পরিবর্তে তামাক চাষ করেছেন। এ কারণে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে এখন আলুর দাম তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

নারায়নজন গ্রামের কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘এবার হামার কপাল খুলি গেইছে। ধানের পর আলুতো লাভ হওছে। আলুত এমতোন লাভ হামার দশ বছরেও হয় নাই। এক একর জমির আলু বেঁচে আবাদের খরচ, হিমাগার ভাড়া বাদ দিয়াও লাভ হইছে এক লাখ টাকা।’

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারে তারাগঞ্জে তিন হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে আলুর দাম কম পাওয়ায় অনেক কৃষক আলুর চেয়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬১০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ কম হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার তারাগঞ্জ, ইকরচালী, ডাংগীরহাট বাজার ও তিনটি হিমাগার ঘুরে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এস্ট্রারিক্স জাতের আলু ২৪ টাকা, কার্টিনাল জাতের আলু ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা চলছে।

এনএন হিমাগারে রাখা আলু বিক্রির টাকা হিমাগার চত্বরে গুনছিলেন বারোঘরিয়া গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাইজান হামরা তো দশ বছর থাকি আলুর দাম পাই না। এইবার আনা লাভের মুখ দেখুছি। আগের বছর মুই দুই একর জমিত আলু আবাদ করছুনুং। ভালো দাম পাও নাই। ওই জন্যে এবার ৩৯ হাজার টাকা খরচ করি ৭০ শতক জমিত এস্ট্রারিক্স জাতের আলু আবাদ করছুনু। আলু পাছুন ১১৯ বস্তা (৫০ কেজি)। সেই আলু হিমাগারোত থুছুনু। এ্যালা ২৪টাকা করি কেজি দামে সেই আলু এক লাখ ৪২ হাজার ৮০০টাকা বেচানু। হিমাগার ভাড়া, বস্তা, চাষের খরচ বাদে এবার ৬৯হাজার ৫৫০ টাকা লাভ পানু।’

আমজাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাড়িয়ারকুঠি গ্রামের আলু চাষি সোনা মিয়া। তিনি বলেন, ‘আলু আবাদ করি মেল্যা দিন থাকি লস খাওছি। এইবার আনা লাভের মুখ দেখুছি। এবার মুই এক একর জমিত তাংকু (তামাক) আর এক একর জমিত আলুর আবাদ করছুনু। মোর মতোন হামার গ্রামের মেল্যা মানুষ আলুর আবাদ কম করছিল। ওই জন্যে আলুর চাষ কম হইচে। এমতোন দাম থাকলে হামরা আর আলু ছাড়ি তাংকু আবাদ করমো না।’

ইকরচালী বাজারে কথা হয় মাটিয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক মান্নান হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগোত হিমাগারোত আলু থুবার জায়গা না পেয়া এক একর জমির ৯৫ বস্তা (৮৫ কেজি) আলু কম দামোত বেচে দিয়া লস খাছুং। এই জন্যে রাগ হয়া তিন বছর থাকি আলুর আবাদ না করি তামাকের আবাদ করছুং। এইবার ৩০শতক জমিত দেশি আলু গাড়ছুং। ফলনও ভালো হইচে। ওই আলু হিমাগারোত থুছুন। এ্যালা তাক ৩২ টাকা করি কেজি বেচাওছুন। এমন দাম বাজারোত থাকলে আলু চাষ করিম।’

সিনহা হিমাগারের ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা এক লাখ বস্তা। কিন্তু আমরা আলু পেয়েছি ৫০ হাজার বস্তা। সেই আলু হিমাগারে রাখার জন্য কৃষকদের এবার ধরনা দেওয়া হয়েছে। আলুর চেয়ে তামাক চাষে লাভ বেশি হওয়ায় অনেক চাষি আলুর পরিবর্তে তামাক চাষে ঝুঁকেছেন। এ কারণে এ বছর আলুর চাষ কম হয়েছে। ফলে বর্তমান বাজারে আলুর দাম বেড়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার রায় বলেন, ‘তামাক চাষ না করার জন্য কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা শুনছেন না। লাভ বেশি পাওয়ায় আলুর পরিবর্তে অনেক কৃষক তামাক চাষ করেন। এ কারণে এ বছর ৬১০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ কম হয়েছে। তবে বর্তমান বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় আলু চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামী মৌসুমে আলুর চাষ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’