হাসপাতালে ভর্তি ৫% করোনা রোগী

দেশে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন) আছেন প্রায় ১৯ শতাংশ। সবমিলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেবার আওতায় আছেন মোট রোগীর প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ। বাকিরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২ হাজার ১৯৭ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৮০ হাজার ৮৩৮ জন। বাকি ৮৯ হাজার ৯৯ জন এখনো চিকিৎসাধীন।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশের লক্ষণ ও উপসর্গ মৃদু। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। মূলত যাঁদের অবস্থা খারাপ, তাঁদেরই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের একটি বড় অংশের মৃত্যু হচ্ছে বাসায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, অবস্থা গুরুতর হওয়ার পরও অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

গতকাল নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির হাল নাগাদ তথ্য তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৩৭০ জন। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় ৪ হাজার ১৭৬ জন ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন ১৯৪ জন। কোভিড-১৯–এর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আইসিইউ আছে ৩৯৪টি। এর মধ্যে ২০০টি আইসিইউ খালি। আর ১৪ হাজার ৯৪৫টি সাধারণ শয্যার ১০ হাজার ৭৬৯টিই খালি।

পরীক্ষা কিছুটা বেড়েছে, শনাক্তও বেড়েছে

>গতকাল পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা বাড়ায় নতুন রোগী শনাক্ত আবার বেড়েছে। গতকাল পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ছিল ২২.২৬ শতাংশ।

কয়েক দিনের তুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা বাড়ায় গতকাল নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। গতকাল এক দিনে ৩ হাজার ৪৮৯ জন নতুন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের খবর জানানো হয়। টানা পাঁচ দিন পর এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০০–এর ওপরে উঠল।

করোনা সংক্রমণ কমানোর অন্যতম উপায় হলো রোগী শনাক্ত করে তাঁদের বিচ্ছিন্ন রাখা। সেই পন্থা ধরে দেশে নমুনা বাড়ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। শনাক্তও হচ্ছিল বেশি রোগী। কিন্তু জুনের শেষের দিকে করোনা শনাক্তের পরীক্ষায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি চারটি উপসর্গ না থাকলে পরীক্ষা না করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এর পাশাপাশি আছে কিটের স্বল্পতা। এসব মিলিয়ে ৩ জুলাই থেকে পরীক্ষার সংখ্যা হঠাৎ অনেক কমে যায়। পরীক্ষা সাড়ে ১৪ হাজারে নেমে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা আবার সাড়ে ১৫ হাজারের ওপরে উঠেছে। অবশ্য পরীক্ষার সংখ্যার হেরফেরে রোগী শনাক্তের হারে খুব একটা এদিক–সেদিক হয়নি।

গতকাল সংবাদ বুলেটিনে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে; কিছু সময় পরপর সাবান–পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে; জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে; সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে এসব ব্যবস্থাই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সব কটিই একসঙ্গে পালন করতে হবে।