সোনার দাম আর করোনায় চরম দুঃসময়ে স্বর্ণকারেরা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

কৃষকের ঘরে ধান উঠলে এমনিতেই স্বর্ণকারদের কাজ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে ঈদ যোগ হলে তো কথাই নেই। স্বর্ণকারদের দম ফেলার সময় থাকে না। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। কৃষকের ঘরে ধান উঠেছে, ঈদুল ফিতরের পরে ঈদুল আজহা চলে এসেছে। কিন্তু পাবনার বেড়া উপজেলার এক হাজারের বেশি স্বর্ণকার টানা কয়েক মাস বেকার রয়েছেন।

স্বর্ণকার (কারিগর) ও স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে প্রায় সব ধরনের পেশায় দুরবস্থা চলছে। কিন্তু স্বর্ণকারদের পেশায় বিপর্যয় চলছে আরও দুই মাস আগে থেকে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে। এতে স্বর্ণালংকার তৈরির কাজ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই স্বর্ণকারেরা বেকার হতে থাকেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, সামনের ধান কাটা ও ঈদ মৌসুমে বেকারত্ব কেটে যাবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে উল্টো স্বর্ণের দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের সেই আশা পূরণ হয়নি। এবার ধান কাটা ও ঈদ মৌসুম প্রায় একসঙ্গে এলেও কেউ স্বর্ণালংকার তৈরি করাতে আসছেন না। ফলে ছয় মাস ধরেই বেকার হয়ে রয়েছেন স্বর্ণকারেরা।

উপজেলা স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, বেড়ায় দুই শতাধিক স্বর্ণালংকার তৈরির দোকান রয়েছে। এসব দোকানে এক হাজারের বেশি স্বর্ণকার কাজ করেন। ঈদে ও ধান কাটার মৌসুমে এসব স্বর্ণকার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অলংকার তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও এবার তাঁরা একেবারেই বেকার। অনেকেরই দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত দোকান ভাড়া বাকি পড়েছে। দোকানের ভাড়া শোধ করা দূরের কথা, কারওর কারওর খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই পেশা বদলে ফেলছেন।

উপজেলা সদর বাজারের স্বর্ণকার নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘ছয় মাস ধরে আমাগরে আয়-রোজগার বন্ধ। আমাগরে প্রতিটা দিন কত যে কষ্টে কাটছে, তা একমাত্র আমরাই বুঝি। অন্য পেশার অনেকেই সরকারি সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু আমাগরে দেখার কেউ নাই।’

স্বর্ণকার ও ব্যবসায়ী রঞ্জন কর্মকার বলেন, বিভিন্ন ধরনের পেশার মধ্যে সম্ভবত স্বর্ণকারেরাই সবচেয়ে বেশি দুরবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর অতিপরিচিত পাঁচজন স্বর্ণকার চিরদিনের জন্য এই পেশা ত্যাগ করেছেন। তাঁদের তিনজন গার্মেন্টসে ও দুজন অন্য কাজে যোগ দিয়েছেন।

স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বরেও প্রতি ভরি পাকা স্বর্ণের দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। জানুয়ারিতে এর দাম হঠাৎ বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৭ হাজারে উঠে যায়। দাম বাড়ার কারণে সেই সময় থেকেই স্বর্ণালংকার তৈরির কাজ বন্ধ হতে শুরু করে। স্বর্ণকারেরা যখন স্বর্ণের দাম কমার অপেক্ষায় ছিলেন, তার কিছুদিনের মধ্যে করোনার কারণে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে দোকানপাট খুললেও স্বর্ণের দাম না কমে উল্টো আরও বেড়েছে। এখন প্রতি ভরি পাকা স্বর্ণের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ৬৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে স্বর্ণকারদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে।

উপজেলা স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌর কর্মকার বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ স্বর্ণকারদের এমন দুঃসময় আর কখনো দেখা যায়নি। যেভাবে স্বর্ণকারেরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন, তাতে কিছুদিন পরে হয়তো এ পেশায় অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।