সুনামগঞ্জে সুরমার পানি কমছে, তবে বাড়ছে হাওরে

গত পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সব কটি উপজেলা গত শুক্রবার থেকে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। তলিয়ে গেছে সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলছেন মানুষ। রাধানগর, সদর, সুনামগঞ্জ, ১৩ জুলাই। ছবি: আনিস মাহমুদ
গত পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সব কটি উপজেলা গত শুক্রবার থেকে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। তলিয়ে গেছে সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলছেন মানুষ। রাধানগর, সদর, সুনামগঞ্জ, ১৩ জুলাই। ছবি: আনিস মাহমুদ

সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও পানি বাড়ছে হাওর এলাকায়। আজ সোমবার সকাল নয়টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৪১ মিলিমিটার। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। তবে পানি বাড়ছে জেলার নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত দিরাই, শাল্লা, ধরমপাশা ও জগন্নাথপুর উপজেলায়। এসব এলাকায় মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন। এসব এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-ছাতক, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে। সুনামগঞ্জ থেকে মানুষজন নৌকা যাতায়াত করছেন বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায়।

গত পাঁচদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় সবকটি উপজেলা শুক্রবার থেকে আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। একইভাবে প্লাবিত হয়েছে জেলার চারটি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৯০ ভাগ এলাকায় বন্যার পানি রয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় ভোগান্তি পোাহাচ্ছেন তারা। রোববার রাতে ভারী বৃষ্টি না হলেও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত আছে।

গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। রাধানগর, সদর, সুনামগঞ্জ, ১৩ জুলাই। ছবি: আনিস মাহমুদ
গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। রাধানগর, সদর, সুনামগঞ্জ, ১৩ জুলাই। ছবি: আনিস মাহমুদ

সোমবার সকালেও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের শহরের উকিলপাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, কালিপুর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, হাসননগর, বড়পাড়া, উত্তর আরপিনগর, মুহাম্মদপুর, হাজীপাড়া, মধ্যবাজার, নবীনগর, ধোপাখালি, নতুনপাড়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে পানি দেখা গেছে। এসব এলাকায় মানুষের বসতঘরে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষজনের।

জেলার দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সফি উল্লাহ বলেন, তাঁর উপজেলায় পৌর শহর ও কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রনজিৎ চৌধুরী জানান, তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তবে রোববার রাত থেকে পানি স্থির হয়ে আছে।

বন্যায় তলিয়ে গেছে সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলছেন মানুষজন। কাজির পয়েন্ট, সুনামগঞ্জ, ১৩ জুলাই। ছবি: আনিস মাহমুদ
বন্যায় তলিয়ে গেছে সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলছেন মানুষজন। কাজির পয়েন্ট, সুনামগঞ্জ, ১৩ জুলাই। ছবি: আনিস মাহমুদ

ছাতকের ইউএনও মো. গোলাম কবির বলেন, তাঁর উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আছে। সবগুলোই বন্যাকবলিত। উপজেলা ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে খিচুরি ও শুকনো খাবার বিতরণ করছেন তাঁরা। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যাকবলিত মানুষের মাছে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলার ১১টি উপজেলার ৮১টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভা বন্যাকবলিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২৬৯টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার ৩৭৯টি পরিবারের পাঁচ হাজার ৪১৬ জন নানা বয়সী মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ৩৩৭ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, তিন হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে আরও ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ৮০০০হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেছেন, সুনামগঞ্জে রোববার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে না। একই সময়ে উজানের ঢল কিছুটা কম নেমেছে। যে কারণে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমছে। ভারী বৃষ্টি না হলে এবং উজানের ঢল না নামলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।