চাক জালের জমজমাট হাট

বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাক জাল। হুবহু বুচনা চাঁইয়ের মতো। শুধু বাঁশের পরিবর্তে সুতার জাল ব্যবহার করে এই জাল তৈরি করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাক জাল। হুবহু বুচনা চাঁইয়ের মতো। শুধু বাঁশের পরিবর্তে সুতার জাল ব্যবহার করে এই জাল তৈরি করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

সুতা আর বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি করা হয় মাছ ধরার ফাঁদ। চাকার মতো ঘোরানো যায়, তাই স্থানীয় নাম চাক জাল। তবে দেখতে বুচনা চাঁইয়ের মতো হওয়ায় এটি বুচনা জাল নামেও পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি মাছ ধরার জন্য কৃষক ও জেলেরা চাক জাল ব্যবহার করেন।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া সদরের বালুর মাঠে সপ্তাহের প্রতি বুধবার চাক জালের হাট বসে। বর্ষা মৌসুমে ধান খেতে মাছের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে চাক জালের কেনাবেচা হয়।

চাক জালের কারিগরেরা জানান, গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে ধান খেত ও নালায় বাঁশের তৈরি চাঁই পেতে মাছ ধরতেন মাছ শিকারিরা। এক দশক ধরে উপকূলীয় এলাকায় বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁইয়ের উৎপাদন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তা ছাড়া বাঁশের সংকটও রয়েছে। তবে চাক জাল তৈরিতে খরচ কম। জাল তৈরির কাঁচামাল সহজলভ্য। তাই বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাক জাল। হুবহু বুচনা চাঁইয়ের মতো। শুধু বাঁশের পরিবর্তে সুতার জাল ব্যবহার করে এই জাল তৈরি করা হয়। স্থানীয় কৃষকদের নিজস্ব মেধা ও শ্রম দিয়ে উদ্ভাবিত এ জালের উৎপাদন খরচ ও দাম কম হওয়ায় চাক জালের চাহিদা বেড়েছে।

উপজেলা সদরের দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামের মো. আইউব বলেন, এক সময়ে বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের চাহিদা ছিল। বর্তমানে বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের দাম বেশি হওয়ায় চাক জাল মানুষ বেশি কিনছে।

উপজেলার বকসির ঘটিচোরা গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে ধান খেতে ও ছোট নালায় প্রচুর চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। চিংড়ি মাছ ধরার জন্য চাক জালের প্রচুর চাহিদা। তিনি বাড়ির পাশে নালায় চাক জাল দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার জন্য জাল কিনেছেন।

বর্ষা মৌসুমে খাল, বিল ও ধানের খেতে পানি বাড়ায় মাছ ধরার জন্য চাঁই ও জালের চাহিদা বেড়ে যায়। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরশহরের বালুর মাঠে বর্ষা মৌসুমের প্রতি বুধবার চাক জালের হাট বসে। ছবি: প্রথম আলো
বর্ষা মৌসুমে খাল, বিল ও ধানের খেতে পানি বাড়ায় মাছ ধরার জন্য চাঁই ও জালের চাহিদা বেড়ে যায়। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরশহরের বালুর মাঠে বর্ষা মৌসুমের প্রতি বুধবার চাক জালের হাট বসে। ছবি: প্রথম আলো

জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত চাক জালের বেচাকেনা বেশি হয়। এ সময় ধানের খেত ও ছোট ছোট নালায় চাঁই ও চাক জাল পেতে মাছ ধরা হয়। তবে বছরজুড়েই মাছ ধরার জন্য চাক জলের চাহিদা রয়েছে। বড় চাক জাল ১৫ থেকে ২০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। বড় একটি জাল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ছোট জাল সাধারণত চার থেকে পাঁচ হাত হয়। দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

এক দশকের বেশি সময় ধরে সদর ইউনিয়নের মিঠাখালী গ্রামের ১০ থেকে ১৫টি কৃষক পরিবার শুধু বর্ষা মৌসুমে চাক জাল তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। অনেক কৃষক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চাক জাল তৈরি করেন। প্রতি হাটে ২০০ থেকে ৩০০ জাল বিক্রি হয়।

উত্তর মিঠাখালী গ্রামের চাক জাল বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে খান খেতে চিংড়ি মাছ ধরার জন্য চাক জালের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় তাঁরা কৃষি কাজের অবসরে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি চাক জাল তৈরি করেন। ঘরে বসে নারীরাও চাক জাল তৈরি করেন। প্রতি বুধবার মঠবাড়িয়া হাটে জাল বিক্রি করেন। প্রতিটি বড় জাল বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ছোট জাল বিক্রি করে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা লাভ হয়।