কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথ: স্রোতের সঙ্গে পেরে উঠছে না ফেরি, ঘাটে আটকা পড়েছে ৮০০ গাড়ি

পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়ে যাওয়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের পন্টুনের চারপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়ে যাওয়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের পন্টুনের চারপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। উভয় ঘাটে আটকা পড়েছে কমপক্ষে আট শতাধিক যানবাহন।

নদীতে স্রোত স্বাভাবিক থাকলে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি পারাপারে সময় লাগে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা। বর্তমানে সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি। এ অবস্থায় সীমিত আকারে চলছে ফেরি। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদীর বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে প্রবল স্রোত। পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের সব কটি পন্টুনের চারপাশ তলিয়ে গেছে। ১ ও ৪ নম্বর ঘাটের পন্টুনের ওপরে পানি থাকায় এই দুটি ঘাটে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরিতে যানবাহন তোলার জন্য শুধু ২ ও ৩ নম্বর ঘাটে পন্টুন ব্যবহার করা হচ্ছে।

আর শিমুলিয়া ঘাটের সব কটি পন্টুন পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যেই ৩ ও ১ নম্বর ঘাটে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন নামানো–ওঠানো হচ্ছে। স্রোতের বেগ বেশি থাকায় এই নৌপথে চলাচলকারী ১৯টি ফেরির মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে চলছে দুটি রো রো, দুটি কে-টাইপ ও একটি ছোট ফেরি। এই পাঁচটি ফেরি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিয়ে পারাপার হচ্ছে।

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এতে ঘাটের উভয় পারে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। আজ দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এতে ঘাটের উভয় পারে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। আজ দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সকালে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের সারি। ঘাটের ১, ২ ও ৪ নম্বর টার্মিনাল পণ্যবাহী ট্রাকে ভর্তি। ঘাটের ৩ নম্বর টার্মিনাল যাত্রীবাহী পরিবহন ও ছোট গাড়িতে ভরা। ঘাটের সংযোগ সড়কগুলোতে যানবাহনগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল সীমিত থাকায় যাত্রীরা লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পার হচ্ছেন। তাই লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ বেশি, সেখানে কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এসব নৌযান স্রোতের তীব্রতা উপেক্ষা করে বেশি ঝুঁকি নিয়েই পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে।

টার্মিনালে চার দিন ধরে আটকে পড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সালাম মুনশি বলেন, ‘খুলনা থেকে শুক্রবার রাতে এসেছি। চট্টগ্রামে মাল নামিয়ে বুঝিয়ে দিলে মহাজন টাকা দেবেন। এর আগে কোনো আয় নেই, তিন বেলা শুধু ব্যয়।’

এভাবে টার্মিনালে আটকা পড়েছে অন্তত কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক। এর মধ্যে সাত থেকে আট দিন আগে ঘাটে আসা ট্রাকও রয়েছে। যশোর থেকে ঢাকাগামী ট্রাকচালক চান মিয়া বলেন, ‘আমাদের খবর কেউ রাখে না। কী খেলাম, না খেলাম, তা একমাত্র আমরাই জানি। ঘাটের সবকিছুর দাম চড়া। কাজ না করতে পারলে কেউ এক টাকা দিয়েও সহায়তা করে না।’

ঢাকাগামী যাত্রী মিল্টন রায় বলেন, ‘পন্টুনের আগে হাঁটুপানি। পানি টপকে ফেরিতে ওঠা মুশকিল। তাই ঝুঁকি নিয়েই লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। লঞ্চে এখন আর কেউ করোনার চিন্তা করে না। যে যার মতো চলে। কারও কোনো নজর নেই।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, পদ্মায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় ফেরি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তবু ঘাটটি সচল রাখতে পাঁচটি ফেরি দিয়ে কোনো রকমে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কত দিন থাকবে, তা আমরাও ঠিকমতো বলতে পারছি না।’

বেলা দুইটার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, ঘাটের টার্মিনাল যানবাহনে ভরা। যাত্রীবাহী পরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাক মিলে চার শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। শিমুলিয়া ঘাটেও একই রকম চাপ।