কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত

ফেরির পন্টুনে ওঠার র‍্যাম ও এর সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। গতকাল রাজবাড়ীর জৌকুরা ঘাটে। ছবি: প্রথম আলো
ফেরির পন্টুনে ওঠার র‍্যাম ও এর সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। গতকাল রাজবাড়ীর জৌকুরা ঘাটে। ছবি: প্রথম আলো

পদ্মায় প্রবল স্রোতের কারণে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে উভয় ঘাটে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়েছে। তবে এ পথে প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে উভয় ঘাটের বেশির ভাগ পন্টুনের চারপাশ তলিয়ে গেছে। ইট ও বালু ফেলে পন্টুন উঁচু করে উভয় পাড়ের চারটি ঘাটে সীমিত আকারে যানবাহন নামানো-ওঠানো হচ্ছে। বর্তমানে এ নৌপথে ১৫টি ফেরির মধ্যে ৭টি চলাচল করছে। তার ওপর এগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন গুণ সময় নিয়ে চলছে। এ কারণে উভয় ঘাটে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়েছে।

ঘাটে আটকা পড়া ট্রাকের চালক সাকিল শেখ বলেন, ‘খুলনা থেকে গত শুক্রবার রাতে টার্মিনালে এসেছি। এখনো একই জায়গায় পড়ে আছি। সামনে যেতে পারছি না, পেছনেও ফিরতে পারছি না। খুব কষ্টের মধ্যে সময় কাটছে।’

গতকাল দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছোট ও ব্যক্তিগত গাড়ি কমপক্ষে আড়াই শ। টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কে আটকা পড়েছে আরও অন্তত চার শ পণ্যবাহী ট্রাক। বেশির ভাগ যাত্রী লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। সেখানে তেমন কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বেশির ভাগ মানুষ মুখে মাস্ক না পরেই চলাচল করছে।

বিকেল চারটার দিকে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের চালক সুকুমার রায় বলেন, ‘সকাল আটটায় বরিশাল থেকে ঘাটে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো ফেরিতে উঠতে পারিনি। ছোট গাড়ির অনেক বড় লাইন। কখন পার হতে পারব, জানি না। দিনের আলো থাকতে থাকতে ফেরিতে না উঠতে পারলে আবার বরিশাল ফিরে যেতে হবে।’ 

মুন্সিগঞ্জগামী মো. রফিকুল বলেন, ‘ফেরি না পেয়ে লঞ্চে যাচ্ছি। লঞ্চে অনেক ভিড়। জরুরি ভিত্তিতে ওপারে যেতে হবে। তাই এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি।’

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘নদীতে এখন প্রবল স্রোত। এই স্রোত সামলে ফেরি চলানো মুশকিল। ফেরিগুলোয় বেশি লোড নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি পারাপারে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে। এ কারণে ঘাটের উভয় পাড়ে জ্যাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি কত দিন থাকবে, জানি না। তবে রাতে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সাত দিনের বেশি সময় ধরে সন্ধ্যার পর ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে।’

রাজবাড়ীর জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌপথেও ভোগান্তি

প্রতিনিধি, রাজবাড়ী জানান, রাজবাড়ীর সঙ্গে পাবনার নদীপথে সরাসরি যোগাযোগের জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ নৌপথের ফেরিঘাটের পন্টুনের র‌্যাম ও সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে এ পথের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে এই ঘাট পরিচালিত হয়।

সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জৌকুরা ঘাট থেকে প্রতিদিন তিনবার ফেরি ছেড়ে যায়। এই পথে দুটি ছোট ফেরি রয়েছে। এ ছাড়া দুটি লঞ্চ ও কয়েকটি ট্রলার যাতায়াত করে। সকাল ৮টা, দুপুর সাড়ে ১২টা ও বেলা আড়াইটায় ফেরি ছেড়ে যায়। করোনার কারণে ফেরি চলাচল কিছুদিন বন্ধ ছিল। ঘাট স্থানান্তর করার পর ৭ জুলাই থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। এ পথে রাজবাড়ী ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর বাস ও মালবাহী ট্রাক পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। এই নৌপথ ব্যবহার করলে অন্তত ১২০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হয়। এই পথে বাস ও ট্রাক ছাড়াও মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে।

গত শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, জৌকুরা ফেরিঘাটের পন্টুনে ওঠার রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গেছে। সেটির একপাশে ইট দিয়ে আরেকটি হাঁটার রাস্তা করা হয়েছে। এই রাস্তাতেও পানি উঠেছে। পানির মধ্যে দিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর মোটরসাইকেলের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হাঁটুপানিতে নেমে মোটরসাইকেল ধাক্কাতে হচ্ছে।

মোটরসাইকেলচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার বাড়ি পাবনা। ফরিদপুরে চাকরি করি। এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করি। এই পথটুকু ইট দিয়ে বাঁধাই করে দিলে ভালো হতো।’

জানতে চাইলে ঘাটের ইজারাদার মোস্তাফিজুর রহমান শরীফ বলেন, ঘাটে কয়েক দিন ধরে পানি এসেছে। আবার অল্প দিনের মধ্যে নেমে যাবে।

সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বন্যার পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার কারণে ঘাটের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে যাত্রীদের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। পারাপারের রাস্তায় ভোগান্তি দূর করার জন্য ইট পাঠানো হয়েছে।’