শরীয়তপুরে সড়কে বন্যার ক্ষত, মানুষের দুর্ভোগ

দেখে বোঝার উপায় নেই এটি সড়ক। বন্যার পানি উঠে এই হাল হয়েছে। তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সোমবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
দেখে বোঝার উপায় নেই এটি সড়ক। বন্যার পানি উঠে এই হাল হয়েছে। তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সোমবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

পানি নেমে গেলেও বন্যার ক্ষত রয়ে গেছে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে। সড়কটির আট কিলোমিটার অংশে ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অস্থায়ীভাবে মেরামতের পর সড়কটি চালু করা হয়। তবে কিছুদিন না যেতেই সড়কটি আবার বেহাল হয়ে পড়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বন্যার পানিতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কটির আট কিলোমিটার গত ২১ জুলাই তলিয়ে যায়। তখন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পানি কমতে শুরু করলে সড়ক থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু ওই আট কিলোমিটার অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে সংস্কারের পর ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। আর এখনো অনেক আঞ্চলিক ও উপজেলা সড়কে বন্যার পানি রয়েছে। ফলে যাতায়াত করতে না পেরে মানুষকে ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের বাসচালক লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ শেষে যখন কর্মস্থলে ফেরার জন্য যাত্রীদের চাপ ছিল, তখন স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেনের অনুরোধে সড়ক বিভাগ খানাখন্দ ও গর্তে ইট, বালুর বস্তা, বেইলি সেতুর পাটাতন ফেলে যান চলাচল চালু করে। কিন্তু কয়েক দিন যানবাহন চলাচলের পর সড়কের অবস্থা এখন আরও খারাপ হয়েছে। আমাদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শরীয়তপুরে সড়কে বন্যার পানি উঠতে শুরু করে। বন্যায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়, জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ৪০০ গ্রাম প্লাবিত হয়। তলিয়ে যেতে থাকে বিভিন্ন সড়ক। চলাচলে ঝুঁকি থাকায় ওই সময় নিমজ্জিত সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন ৩০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪৭০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ২৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে ২১ জুলাই, নড়িয়া-জাজিরা সড়কে ১২ জুলাই, নড়িয়া-পাঠানবাড়ি-ডগ্রি সড়কে ১৫ জুলাই, নড়িয়া-ঘড়িসার সড়কে ১৫ জুলাই, মুলফৎগঞ্জ-চাকধ-শরীয়তপুর সড়কে ১৮ জুলাই পানি ওঠে। এ কারণে এসব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে শুধু ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল শুরু করা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

নড়িয়ার ডগ্রি-আন্ধারমানিক সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন সেকান্দার মীরবহর। বন্যার পানিতে সড়কটি তলিয়ে যায়। পানি নামলেও সড়কের দুটি স্থান ভেঙে গেছে। সেখানে স্থানীয় ব্যক্তিরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হন। এক মাস ধরে সেকান্দার অটোরিকশা চালাতে পারেন না। সেকান্দার বলেন, ‘সড়কটি কবে সংস্কার হবে আল্লাহই জানেন। এক মাস যাবৎ অটোরিকশা চালাতে পারছি না, আয় বন্ধ। পরিবার নিয়ে অসুবিধায় আছি।’

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির ব্যবস্থাপক পরিমল দত্ত বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো নড়িয়া-জাজিরা, নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর-কার্তিকপুর, শরীয়তপুর-নাগেরপাড়া সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের চাপে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো হচ্ছে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের কিছু স্থানে বেইলি সেতুর পাটাতন ফেলে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। সড়কটি সংস্কার করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান ফরাজি বলেন, ‘বন্যায় জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সেখানে পানিতে অনেক সড়ক নিমজ্জিত হয়েছে। এখনো সব সড়কের পানি নামেনি। ৩০০ কিলোমিটার পাকা ও ৪৭০ কিলোমিটার কাঁচা সড়কের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে, এমন প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’