সেনানিবাসের জন্য ১৮০০ একর বনভূমি বরাদ্দ

স্থায়ী সেনানিবাস স্থাপনের জন্য কক্সবাজারের রামু উপজেলার এক হাজার ৭৮৮ দশমিক ৯৮ একর বনভূমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব জমির ৯৮ দশমিক ৭১ শতাংশই পাহাড়শ্রেণীর। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গত ২২ এপ্রিল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
পরিবেশ ও বনসচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে এই বনভূমি আর সংরক্ষিত বা রক্ষিত বনভূমি হিসেবে গণ্য হবে না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু সংরক্ষিত বা রক্ষিত এই ভূমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্থায়ী সেনানিবাস স্থাপনের জন্য ব্যবহূত হবে এবং সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেছে, তাই জনস্বার্থে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হলো।
বন আইন, ১৯২৭-এর (সংশোধিত ২০০০) ২৭ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই বনভূমি সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ বরাদ্দের বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো কয়েক মাস হলো মন্ত্রণালয়ে এলাম। এ ধরনের কোনো ফাইল আমার কাছে আসেনি। অন্তত আমার সময়ে এই সিদ্ধান্ত হয়নি।’
২২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে—এই তথ্য জানালে বনমন্ত্রী বলেন, ‘তা ঠিক আছে। আমার মনে হয়, এই বরাদ্দ দেওয়ার আগে নিশ্চয়ই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) দায়িত্বশীল কেউ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
১৯০৭ সালে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন রামু উপজেলার এই ভূমি সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে তৎকালীন পূর্ববাংলা ও আসাম গেজেটে প্রকাশিত হয়। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত আরেক গেজেটেও এই ভূমি মূলে সংরক্ষিত, যা পরে ১৯৩৫ সালে ঘোষিত হয় মূলে রক্ষিত বন হিসেবে।
সেনানিবাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া এই বনভূমিতে পাঁচ শ্রেণীর ভূমি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পাহাড়, ছড়া, টিলা, পুকুর ও পুকুরপাড়। রামু উপজেলার রাজারকুল মৌজার অধীনে এক হাজার ১৮০ একর, খুনিয়াপালং মৌজার অধীনে ২৬৪ দশমিক ৫৫ একর এবং উমাখালী মৌজার অধীনে রয়েছে ৩৪৪ দশমিক ৪৩ একর বনভূমি। উমাখালীরটা রক্ষিত হলেও বাকি দুই মৌজার ভূমি সংরক্ষিত।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় জমির চৌহদ্দি ঠিক করেছে এভাবে—উত্তরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের নারিকেল বীজ বাগান, রাজারপুল রিজার্ভ ও উমাখালী রক্ষিত বন; দক্ষিণে দারিয়াদীঘি রিজার্ভ ও খুনিয়াপালং জোতজমি; পূর্বে আরাকান সড়ক ও তৎপূর্বে কক্সবাজার বোটানিক্যাল গার্ডেন; পশ্চিমে দক্ষিণ মিঠাছড়ি রক্ষিত বন ও তৎপূর্বে কক্সবাজার-টেকনাফ লিংক রোড।
বরাদ্দ দেওয়া জমির বিবরণসংবলিত সারসংক্ষেপ অংশে মন্তব্য করা হয়েছে, উক্ত ভূমিতে ছোট ছোট টিলায় লতাগুল্ম ও বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু গাছপালা রয়েছে।
জমির শ্রেণীর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট জমি এক হাজার ৭৮৮ দশমিক ৯৮ একরের মধ্যে এক হাজার ৭৬৫ দশমিক ৯৩ একরই পাহাড়শ্রেণীর, যা মোট ভূমির ৯৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ১৬ দশমিক ১৬ একর জমি হচ্ছে ছড়াশ্রেণীর। এ ছাড়া, টিলাশ্রেণীর রয়েছে ৬ দশমিক ৬১ একর, পুকুর শূন্য দশমিক ১০ একর এবং পুকুরপাড় শূন্য দশমিক ১৮ একর।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, রামুর পাশাপাশি বান্দরবানের রুমাতেও আরেকটি সেনানিবাসের জন্য ৯৯৭ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। উচ্চপর্যায়ের সরকারি সূত্র জানায়, দুটি নতুন সেনানিবাসসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার জন্য মোট ৪৮ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।