পাঁচ শ বছরের পুরোনো হাম্মাদিয়া মসজিদ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গোলািপ রঙের এক গম্বুজের হাম্মাদিয়া জামে মসজিদ। এলাকার লোকজনের কাছে ‘গায়েবি’ মসজিদ নামে পরিচিত।
চট্টগ্রাম নগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামে এর অবস্থান। প্রায় পাঁচ শ বছরের পুরোনো এ মসজিদ ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন স্থাপনা। মূল মসজিদ ভবনের সঙ্গে বেমানান মনে হচ্ছিল। গম্বুজের গায়ের গোলািপ প্রলেপটিও নতুন করে লাগানো বলে জানা গেছে।
২০১২ সালে প্রকাশিত ইটারনাল চিটাগাং বইয়ে হাম্মাদিয়া মসজিদকে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, হাম্মাদিয়া িদঘির পশ্চিম পারে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত এ মসজিদ। সরকারিভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায় অনন্য এটি এখন ক্ষতির মুখে।
বইয়ের লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষক মুহম্মদ শামসুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া এসব পুরাকীর্তি সংরক্ষণ সম্ভব নয়। কিন্তু এ পর্যন্ত এ ধরনের পুরাকীর্তির ওপর কোনো সার্ভে হয়নি। সার্ভে হলে এবং সে অনুযায়ী পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হলে তখন এটি সংরক্ষণ করা সহজ হবে।
চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক লাভলী ইয়াসমীন বলেন, ‘আমরা মসজিদ এলাকা ঘুরে দেখেছি। প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এটি সংরক্ষণযোগ্য। স্থানীয় লোকজন এবং মুসল্লিরাও এটি সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন। মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করে এর সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করার ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠাব।’
গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের সামনে রাস্তার পাশে একটি বিলবোর্ডে মসজিদ পুনির্নর্মাণের জন্য সাহায্যের আবেদনের পাশাপাশি নবনির্মিত মসজিদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
উন্নয়ন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আট মহল্লাবাসীর সহযোগিতায় তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মিত ভবনে মহিলাসহ প্রায় তিন হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে চারতলা ভবনে থাকবে হেফজখানা ও এতিমখানা।
মসজিদের পাশে একতলা ভবনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। মসজিদের পেছনে প্রায় ১০ একর জায়গায় রয়েছে হাম্মাদিয়া িদঘি। মসজিদের পাশে টিনের ছাউনির একতলা অস্থায়ী মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে।
হাম্মাদিয়া মসজিদের ভেতরের ইট-সুরকির কারুকাজ থাকলেও এর চারপাশের জানালাগুলো ঢাকা পড়েছে নতুন ভবনের দেয়ালের আস্তরণে। মেঝেতে মোজাইক করা হয়েছে এবং কমে গেছে মেঝের গভীরতা।
১৯৮৬ সাল থেকে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী আবদুস শুকুর বলেন, ‘মুসল্লিদের জায়গা সংকুলানের কথা ভেবে কার্যকরী কমিটির সভায় মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মূল মসজিদটিতে হাত দেব না। এটি ভাঙা হবে না।’
তিনি ব্যক্তিগতভাবেও এটি সংরক্ষণের পক্ষে বলে দাবি করে বলেন, ‘মসজিদটি অক্ষত রাখার ব্যাপারে এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। আমাকে নানা রকম চাপ দেওয়া হয়েছে।’ মসজিদটির অবস্থান খাস খতিয়ানের ওপর বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত বছরের মে মাস থেকে মসজিদ পুনর্নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, কবে এবং কারা এ মসজিদ তৈরি করেছিল তা সাধারণ মানুষের জানা নেই বলে একে ‘গায়েবি’ বা ‘অদৃশ্য’ মসজিদ বলে চেনেন। মূল মসজিদের ভেতরে প্রায় ৬০ জন মুসল্লি নামাজ পড়ার সুযোগ পেতেন। এখন পাশের অস্থায়ী মসজিদটিতে এক হাজার ২০০ জনের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা আছে। মসজিদ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের গর্ব। প্রাচীন এ মসজিদ সংরক্ষণ হোক আমরা তা চাই।’