সরদার ফজলুল করিমের জীবনাবসান

সরদার ফজলুল করিম
সরদার ফজলুল করিম

দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম আর নেই৷ গতকাল শনিবার রাত পৌনে একটার দিকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান৷ তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর৷
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আট দিন আগে সরদার ফজলুল করিমকে শমরিতা হাসপাতালে অধ্যাপক অনুপ কুমারের অধীনে ভর্তি করা হয়। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল৷
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সরদার ফজলুল করিম হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগছিলেন৷ সরদার ফজলুল করিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান ছিল৷ তিনি অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন৷
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ফজলুল করিমের মরদেহ পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে৷ এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বাংলা একাডেমিতে৷ এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জোহরের নামাজের পর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে৷
মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সরকার অনুুমতি দিলে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফজলুল করিমের মরদেহ দাফন করা হবে৷ তা না হলে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে৷
জ্ঞানপিপাসু বিপ্লবী এই শিক্ষাবিদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বৈচিত্র্যে ভরপুর৷ মনের লালিত আদর্শকে কখনো বিসর্জন দেননি তিনি৷ বরং প্রতিনিয়ত আরও দৃঢ় করেছেন৷ বৈপ্লবিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে চাকরি ছেড়েছেন, দীর্ঘ ৪ দফায় মোট ১১ বছর জেল খেটেছেন৷
সংক্ষিপ্ত জীবনী: সরদার ফজলুল করিমের জন্ম ১৯২৫ সালের মে মাসে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আটিপাড়া গ্রামে৷ প্রািতষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় এসে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে৷ উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে বিএ অনার্স ও এমএতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন৷ ১৯৪৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন৷ ১৯৪৮ সালে রাজনীতির কারণে স্বেচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় ইস্তফা দেন তিনি৷ ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমির অনুবাদ শাখায় যোগ দেন৷ মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে তিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান৷ তিনি এক মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন৷
সরদার ফজলুল করিমের রচিত ও অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স, রুশোর সোশ্যাল কনট্রাকট, পাঠপ্রসঙ্গ, চল্লিশের দশকের ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ, সেই সে কাল: কিছু স্মৃতি কিছু কথা, নানা কথা, নানা কথার পরের কথা এবং নূহের কিসমত ইত্যাদি৷ এ ছাড়া ‘দর্শনকোষ’ নামে দর্শনের একটি অভিধান লিখেছেন তিনি৷
সরদার ফজলুল করিম বাংলা একাডেমির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন৷