গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনে বিপর্যস্ত যাত্রীসেবা

যাতায়াতের সুবিধার ফলে যাত্রীর কমতি নেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে সেবা পাচ্ছে না রাজধানীর গেন্ডারিয়া রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীরা। এ ছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অবাধ বিচরণের ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তাও রয়েছে হুমকির মুখে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেন চলাচল করে তিনটি। এই তিনটি ট্রেন প্রতিদিন ১৬ বার করে মোট ৩২ বার যাওয়া-আসা করে। এই স্টেশন থেকে প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পথে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু স্টেশনটিতে যাত্রীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার থাকলেও তা ব্যবহারের সুযোগ নেই। একটি শৌচাগার থাকলেও সেটি সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। আর যাত্রীসংখ্যার তুলনায় প্ল্যাটফরমের আয়তনও ছোট। ফলে ভিড়ের সময় দাঁড়াতেই বেগ পেতে হয় যাত্রীদের।
কমলাপুর যাওয়ার জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করছিলেন যাত্রী সুমাইয়া আক্তার। বললেন, গেন্ডারিয়া থেকে বাসে কমলাপুর, মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এই স্টেশন থেকে ট্রেনে মাত্র ১০ মিনিটেই কমলাপুর যাওয়া যায়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, পাগলা, চাষাড়ায় যেতেও তুলনামূলক কম সময় লাগে। কিন্তু এখানে যাত্রীদের জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটুকুও নেই।
যাত্রীসেবার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্টেশন মাস্টার মো. হাফিজুর রহমান জানান, বিশ্রামাগার একটি আছে। শৌচাগারও আছে, তবে সেটি কেউ চাইলে খুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু স্টেশন ঘুরে দেখা গেল, বিশ্রামাগার হিসেবে যে কক্ষের কথা বলা হয়েছে, সেখানে যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।
গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্টেশনটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন পাঁচজন। অথচ ১৯৮৯-৯০ সময়েও এখানে ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এখন আগের তুলনায় যাত্রী ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়লেও লোকবল পাঁচ গুণের বেশি কমে গেছে।
স্টেশন মাস্টার জানান, এই স্টেশনে ন্যূনতম সেবা দেওয়ার জন্য কমপক্ষে ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন। বর্তমানে লোকবল কম থাকায় এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চাপ যেমন বেশি পড়ছে, যাত্রীরাও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না। বর্তমানে স্টেশনটিতে তিনটি পদের বিপরীতে স্টেশন মাস্টার আছেন দুজন, ছয়জন পয়েন্টম্যান থাকার কথা থাকলেও আছেন তিনজন। আগে ল্যাবম্যান কর্মরত থাকলেও এখন ওই পদে কেউ নেই।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অবাধ চলাফেরায় যাত্রীদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে। যাত্রীদের একজন কায়সার আহমেদ জানালেন, রমজান মাসে এখন মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের বিচরণ কম হলেও অন্যান্য সময়ে গাঁজার গন্ধে দিনের বেলায় প্ল্যাটফরমে দাঁড়ানো যায় না।
স্টেশন অফিস সূত্র জানায়, আগে এই স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের একটি ফাঁড়ি থাকলেও কয়েক বছর আগে ফাঁড়িটি তুলে নেওয়া হয়। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তার দিকটিও দুর্বল হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশনের একজন কর্মচারী বলেন, স্টেশনের পাশে রেললাইন ধরে গড়ে ওঠা খুপরি ঘরগুলোয় মাদকের ব্যবসা চলে। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা স্টেশনের প্ল্যাটফরমেই মাদকের আসর বসান। দিনের বেলা গাঁজা সেবন করলেও রাতে এখানে অন্যান্য মাদকেরও আসর বসে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া জানান, স্টেশনের মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা ও মাদক বিক্রেতারা ভাসমান। তবে পুলিশ প্রায়ই সেখানে অভিযান চালায়, মাঝেমধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠানো হয়।