টাকার অভাবে উড়াল বন্ধ ইউনাইটেডের

পরিচালন ব্যয় জোগান দিতে না পারায় বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথের সব বিমান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিমান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। উড্ডয়ন স্থগিত ঘোষণার পরপর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ইউনাইটেড এয়ারের কাউন্টার বন্ধ করে এর কর্মীরা চলে যান। এই অবস্থায় ইউনাইটেডের ঢাকা-মাসকাট গন্তব্যের ১৬০ জন যাত্রী বিমানবন্দরে এসে আটকা পড়েন। একপর্যায়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
রাত ১১টায় বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন বলেন, ইউনাইটেডের লোকজন যাত্রীদের বিপদে ফেলে চলে গেছে। আর্মড পুলিশের সদস্যদের নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বুঝিয়ে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তিনি জানান, এসব যাত্রীর বেশির ভাগই প্রবাসী শ্রমিক। অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ পর্যায়ে।
উত্তরায় ইউনাইটেড এয়ারের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিমান সংস্থাটির সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেন ফ্লাইট পরিচালনা বিভাগের পরিচালক ক্যাপ্টেন ইলিয়াস। এ সময় সংস্থাটির বিমান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথে বিমান চালাতে দৈনন্দিন যে খরচ দরকার, সেটির অভাবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে উড্ডয়ন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। গতকালও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পাঁচটি ফ্লাইটের নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
বেসরকারি এ সংস্থাটি দেশের অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, কক্সবাজার, বরিশাল, রাজশাহী, সৈয়দপুর, ঈশ্বরদীসহ আটটি পথে এবং আন্তর্জাতিকভাবে লন্ডন, দুবাই, কুয়ালালামপুর, কাঠমান্ডু, কলকাতা, জেদ্দা, ব্যাংকক, মাসকাট, সিঙ্গাপুরসহ নয়টি পথে বিমান পরিচালনা করত।
এমন সময়ে সংস্থাটির উড্ডয়ন কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা এসেছে, যখন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী পদত্যাগ করেন।
জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের চাপের মুখে তিনি এ পদ ছাড়তে বাধ্য হন। গত সোমবার অনুষ্ঠিত সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর নতুন চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই বৈঠকে শেয়ারধারীদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া শীর্ষ ব্যক্তিদের কেউই গতকাল কার্যালয়ে যাননি। এমনকি কোম্পানির শীর্ষ পরিচালন কর্মকর্তারা শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এতে করে বিমান পরিচালনার দৈনন্দিন যে খরচ, সেটির সংকট দেখা দেয়। প্রয়োজনীয় অর্থের নিশ্চয়তা না পেয়ে কর্মকর্তারা গতকালের নির্ধারিত পাঁচটি বিমান যাত্রা বাতিল এবং আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য উড্ডয়ন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এদিকে একমাত্র বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে ইউনাইটেড এয়ার ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তাই এ ঘটনা কোম্পানিটির শেয়ারধারীদের জন্যও বড় ধরনের দুঃসংবাদ। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানযাত্রা স্থগিতের বিষয়টি শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষকে দাপ্তরিকভাবে জানানো হয়নি।
ইউনাইটেড এয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ১০০ কোটি এবং পরবর্তী সময়ে অধিকারমূলক বা রাইট শেয়ার ছেড়ে আরও ৩১৫ কোটিসহ মোট ৪১৫ কোটি টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তুলে নিয়েছে। বাস্তবে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পরও নানা হিসাব কারসাজির মাধ্যমে এটির আয় বাড়িয়ে দেখানো হতো।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট ৫৬ কোটি ৮০ লাখ আট হাজার শেয়ারের মধ্যে ৭৪ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ার রয়েছে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়লে তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ২০০৭-এর জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল।