জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সভা হয় না ১৬ বছর

পুষ্টি সম্পর্কিত দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ কার্যত অচল। গত ১৬ বছরে পরিষদের একটিও সভা হয়নি। পুষ্টি সম্পর্কিত কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে বর্তমানে এই পরিষদের কোনো ভূমিকা নেই।
দেশের শীর্ষ পুষ্টিবিদেরা মনে করেন, জাতীয় পুষ্টি পরিষদ নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে দেশের সরকারি ও বেসরকারি পুষ্টি কার্যক্রমের ওপর নজরদারি নেই। সঠিক দিকনির্দেশনাও কেউ পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অনেক অর্জন থাকার পরও পুষ্টির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ নজরদারি ও দিকনির্দেশনার অভাব।
বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে নিকনির্দেশনা না থাকায় পুষ্টির কাজগুলো এলোমেলোভাবে চলছে। কোনো সমন্বয় নেই। পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে জাতীয় পুষ্টি পরিষদকে সক্রিয় করা জরুরি।’
গত ১৬ বছরে পরিষদের কমপক্ষে ৩২টি সভা হওয়ার বিধান থাকলেও কোনো সভা হয়নি। জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খুব শিগগির পুষ্টি পরিষদ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা ডাকা হবে। তাতে এই পরিষদকে সক্রিয় করার ব্যাপারে পরিকল্পনা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যসচিব জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সদস্যসচিব।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পুষ্টি বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ৩৫ শতাংশ নবজাতক প্রয়োজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ছয় লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে (সিভিয়ার অ্যাকুইট ম্যালনিউট্রিশন)। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪১ শতাংশ শিশু খর্বকায়। ৫১ শতাংশ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। পুষ্টিবিদেরা বলেছেন, দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি কিছু ক্ষেত্রে আফ্রিকার উপসাহারা এলাকার কিছু দেশের চেয়েও খারাপ।
১৯৭৫ সালে জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠিত হয়। ওই বছরের ২৩ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ অনুমোদন করেন। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই পরিষদের ১৬টি বৈঠক হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালের ১১ আগস্ট তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিষদের সর্বশেষ সভা হয়।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ও সহসভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আরও ১২ জন মন্ত্রী ও ছয়জন সচিব এর সদস্য। অন্যান্য সদস্যের মধ্যে আছেন বিভিন্ন অধিদপ্তর, ইনস্টিটিউট, ফাউন্ডেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।
সরকারি গেজেটে পরিষদের কাজের একটি তালিকা আছে। তাতে খাদ্য ও পুষ্টিনীতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা, নীতির আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মসূচি অনুমোদন, পুষ্টিসংক্রান্ত কাজের অগ্রগতি ও ফলাফলের ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও কর্মসূচির সমন্বয় করার কথা বলা আছে। প্রতি ছয় মাসে কমপক্ষে পরিষদের একটি সভা হওয়ার কথা গেজেটে বলা আছে।
মহাখালীর জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় চারটি কক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। গত ৩০ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই কার্যালয়ে গিয়ে সচিবের কক্ষে কাউকে পাওয়া যায়নি। কর্মচারীরা জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। গ্রন্থাগারে গিয়ে গ্রন্থাগারিককে পাওয়া যায়নি। সেখানে পাশাপাশি দুটো টেবিলে বসে চারজন গল্প করছিলেন। সমস্ত বই ও কাগজপত্র দড়ি দিয়ে বেঁধে স্তূপ আকারে রাখা। কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে ভাঙা ও পুরোনো আসবাব।
এই প্রতিবেদকের উপস্থিতির খবর পেয়ে সচিব মো. আমিরুল হাসান বেলা দুইটার সময় উপস্থিত হন। পরিষদের গঠনতন্ত্র, সবশেষ সভার কার্যবিবরণী চাইলে তিনি পরের দিন যাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রশিক্ষণের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তাঁকে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টরের পদ থেকে অপসারণের পর ওএসডি করে রেখেছে।