শতবর্ষে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে পদ্মায় ১০০ বছর আগে উদ্বোধন করা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে রেল চলছে আগের মতোই l ছবি: প্রথম আলো
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে পদ্মায় ১০০ বছর আগে উদ্বোধন করা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে রেল চলছে আগের মতোই l ছবি: প্রথম আলো

কয়েকজন জেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরছে। একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে, ‘কত বড় পুল (সেতু), পুরোটাই নোয়া (লোহা) দিয়া বানাইছে। কত টাকার নোয়া লাগছে?’ অপর জেলের উত্তর ‘তা তো কমপক্ষে পাঁচ শ টাকার নাগছেই!’ কুষ্টিয়া-পাবনার সংযোগ স্থাপনকারী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে এই কৌতুক বেশ প্রচলিত।
এমন কৌতুক আর নানা স্মৃতি নিয়ে আজ ৪ মার্চ পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ শতবর্ষ পূরণ করল। ১৯১৫ সালের এই দিনে পদ্মায় পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে রেলওয়ে ব্রিজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সেই থেকে এই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষে পাকশীতে আজ নানা আয়োজন রয়েছে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উদ্বোধন করেন অবিভক্ত বাংলার ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ l ছবি: সংগৃহীত
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উদ্বোধন করেন অবিভক্ত বাংলার ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ l ছবি: সংগৃহীত

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অবিভক্ত ভারত সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজ করতে এই ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১৯১০-১১ সালে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। তাঁর নামেই ব্রিজটির নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ রুপি)। ১৫টি স্প্যানের এই ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৯৪০ ফুট। ব্রিজ দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য পাশাপাশি দুটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে। তবে রাখা হয়েছে পায়ে হাঁটার পথ। বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটিতে বোমা মারা হয়। এতে ১২ নম্বর স্প্যানটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করা হয়।
এই ব্রিজ ঘিরেই দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পায় পাকশী। গড়ে উঠে রেলশহর পাকশী। ব্রিজের শতবর্ষ উপলক্ষে আজ বেলা দুইটায় ‘হার্ডিঞ্জ সেতু, ঈশ্বরদী ও পাকশী শহর শতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদ’ সেতু চত্বরে কেক কাটবে। এর মধ্য দিয়ে শতবর্ষ উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আমাদের অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেতুটি দেখার জন্য আসছেন। একে ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার।’