কোন আম কখন খাবেন

আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে।
কিন্তু পাড়ব কখন? খাব কখন?
বয়স যায়, জানা যায় কি সব!
আম কি সবাই পেড়ে খায়?
কিনেই খায় বেশির ভাগ।
সমস্যা কী তাতে?
পাড়ার সময় ঠিক নেই তো
বাজারটাই বেঠিক।
বেতাল তাতে খাওয়ার ক্ষণ;
স্বাদ-বেস্বাদের ফেরে
ঠিক থাকে কি গুণমান?
এত প্রশ্নের প্যাঁচে,
রসটাই যায় কেঁচে!
আম হলো ভাই রসাল ফল,
জংলি, খোস আর আবাদি বল।
তো, জঙ্গল থেকেই শিখি!
আম পাড়বে তখন, পাখি খায় যখন;
জংলি, খোস-এর এ-ই নিয়ম!
আপদ কেবল আবাদি আমে,
কখন পাড়ি, কখন খাই;
চিন্তায় কপাল ঘামে।
বাজার বেজায় জটিল স্থান,
লাভ-ক্ষতিতে তুচ্ছ প্রাণ।

আম্রপালি

কাজের কথায় আসি,
কথাটা যদিও বাসি।
কোন আম কখন খাবেন?
যখন পাকবে, তখন খাবেন।
তো, পাকবেটা ঠিক কখন?
লিচুর পরে, গরম জমবে যখন।
সব আম কি তখন পাকে?
আমেরা সব পাকে বটে, নয়কো একসাথে;
পালা করে নামে তারা
জাত-পাত হিসাব করা।
আশু/আগাম, মধ্যমৌসুমি
আর এক জাত সে নাবি,
জটিলতা কমিয়ে সবাই
এই তিন জাত নিয়েই ভাবি।
২০ মে শুরু। জয় গোবিন্দ গুরু!
একা নয় গোবিন্দভোগ,
সঙ্গে পাবেন গোপালভোগ।
এরা দুই স্বজন; আম রাজ্যের সুজন।
আগে এসে রাঙায় ঠোঁট,
বাণিজ্যেও সফল জোট।
বাজার মিলায় গোবিন্দভোগ
সাতক্ষীরা তার বাড়ি;
চাঁপাই, রাজশাহীর গোপালভোগ
নেই তাদের কোনো আড়ি।
রস, মিষ্টতা, স্বাদ; খাবেন যেন প্রসাদ।
পাশে রাখুন রানিপসন্দ, গুলাবখাশ,
ক্ষীরশাপাতি, বৃন্দাবনি;
আরও রাখুন বারি-১।

হিমসাগর

এদের সবার গায়েই সাঁটা
আগাম জাতের ট্যাগ।
১০ জুনেই সব পেকে সারা
তখনো আম খাননি যারা;
শুনে হবেন আত্মহারা
থাকবে কিছু গাছঝাড়া।
মধ্যমৌসুমি জাত নয়কো দূরে,
জুনের শুরুতেই পাকন ধরে।
হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, ল্যাংড়া, খুদিক্ষীরশা;
এতেই কিন্তু হবে না শেষ—
হাঁড়িভাঙা, সূর্যপুরি, বোম্বাই, বারি-২;
টিকিয়ে রাখবে মধুর রেশ।
ল্যাংড়া মোটেও খোঁড়া না,
১০ জুনের একদিন আগেও
গাছ ছেড়ে সে নামে না।
রাজা সে যে মধ্য-জাতের
ক্রেতা ভক্ত তার গন্ধ-স্বাদের।
হিমসাগর সে তো বনেদি আম!
নামেন মর্তে, সঙ্গে নিয়ে জিহ্বার আরাম।
গুণে-মানে অতি উৎকৃষ্ট
ঢাকা, চাঁটগা, আর কুমিল্লার বাজার
যেন তার হাতেই সৃষ্ট।
হাঁড়িভাঙা রংপুরের আম,
সূর্যপুরি ঠাকুরগাঁওয়ের।
অর্থকড়ি ভালোই জোগায়
ভরে দেয় আঁচল মায়ের।
২০ জুনে তারা তৈরি খোকা!
এর আগে খেলে হবেন বোকা।

ল্যাংড়া

নাবি জাতের প্রধান আম
ফজলি তার কেতাবি নাম।
হেলেদুলে বাজার ধরে
জুন মাসটা প্রায় সাঙ্গ করে।
ভারী শরীর দুলিয়ে সে যায়
আগস্ট যখন মাগবে বিদায়।
তার আছে দুই পরম জ্ঞাতি,
সুরমা আর নাক ফজলি নাম।
চিকন শরীর, ফরসা রং
একই রকম হাঁকেন দাম।
আম্রপালি, মোহনভোগ, গৌড়মতি, বারি-৪;
সঙ্গে থাকবে আশ্বিনা, কত চাই আর?
আম্রপালি ছোট বটে
মিষ্টি-স্বাদে আগে ছুটে।
দেশি আমের ত্রিশ ভাগের
কৃতিত্ব এই পালি স্যার।
বাকি থাকে গৌড়মতি, সঙ্গে বারি-৪
জুলাই মাসে নামে ঠিকই
পার করে দেয় সেপ্টেম্বর!
আশ্বিনাই এখন শেষ আম
লেট ভেরাইটি যার জাত নাম।
শেষ জুলাইয়ে নামে ধরায়
লম্বা সময় ঘরে গড়ায়।
কালো চামড়ায় ভাঁজ পড়ে যায়
খাওয়ার জন্য শাহেদ সুধায়।