সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে: শেখ হাসিনা

সেনা সদর দপ্তরে জেনারেলস কনফারেন্সে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
সেনা সদর দপ্তরে জেনারেলস কনফারেন্সে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

সরকারের দৃঢ় ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা দেশ ও বহির্বিশ্বে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে জেনারেলস কনফারেন্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সম্মেলনের ভাষণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। খবর বাসসের।

ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনারা স্বীয় কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন।’
সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল হোসেইন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার আবু বেলাল মুহাম্মাদ সাইফুল হক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকারের সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত মেয়াদে অনেকগুলো ইউনিট গঠন, প্রশিক্ষণের মান যুগোপযোগী করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং পদাতিক কোরের উন্নয়ন ও এর কাজের গতিশীলতায় নতুন করে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী এবং সেই অভীষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর বাস্তবায়ন অনেক দূর এগিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সাংগঠনিক কাঠামোতে আধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যোগাযোগ সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্ত করেছি, যা সামগ্রিকভাবে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর সমরশক্তি ও চলাচল ক্ষমতাকে অনেক গুণে বৃদ্ধি করেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া, পর্যায়ক্রমে আগামী পাঁচ বছরে নবগঠিত ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অর্গানোগ্রামে আরও ৩০টি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য নবগঠিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড পূর্ণোদ্যমে দায়িত্ব পালন করছে।’
সেনাবাহিনীর উন্নয়নে তৃতীয় মেয়াদে তাঁর সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং এর অধীন একটি আর্টিলারি ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, একটি আর্টিলারি ইউনিট এবং দুটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী প্রচুর অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংযোজিত হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে করা এক বিলিয়ন ডলার সামরিক ঋণ প্রোটোকলের মাধ্যমে ছয়টি এম আই-১৭১ হেলিকপ্টার, ৩৩০টি এ পি সি এবং ১০টি আর্মার্ড রিকভারি ভেহিকল কেনার চুক্তি হয়েছে। এর প্রথম চালান ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে। এ সঙ্গে ১৭৪টি টি-৫৯ ট্যাংকের উন্নীতকরণ প্রক্রিয়াধীন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে এক ব্যাটারি এম এল আর এস কেনা হয়েছে এবং আরও দুটি এমএলআরএস ব্যাটারি ২০১৫ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীতে সংযোজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এর একটি পূর্ণাঙ্গ এম এল আর এস রেজিমেন্ট সাভার সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এ ছাড়া ২০১৬ সালের মধ্যে দুইটি এফ এম-৯০, সারফেস টু এয়ার মিসাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব সমরশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে।