মাঠে নামছেন বিএনপির পেশাজীবীরা

logo
logo

সরকারের শেষ সময়ে মাঠে নামবেন বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীরা। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ঈদের পর ঢাকায় কয়েকটি সম্মেলন-মহাসমাবেশ করবে বিএনপিপন্থী পেশাজীবী সংগঠনগুলো।
নিজেদের পেশাসংশ্লিষ্ট দাবি দাওয়ার পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও প্রকাশ্যে থাকবে পেশাজীবীদের কর্মসূচিতে। মহাসমাবেশ থেকে আসতে পারে নতুন কর্মসূচিও। বিএনপি সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার ঢাকায় অবস্থান বা লাগাতার ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে।
সূত্র জানায়, ঈদের পর ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় কনভেনশন করবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। এই কনভেনশনে শিক্ষক, চিকিত্সক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদেরা অংশ নেবেন। ২৪ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। ২৬ অক্টোবর মহাসমাবেশ করবেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। এসব সমাবেশ থেকে পেশাজীবীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এসব সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি পেশাজীবীরাও মাঠে থাকলে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ থাকবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তবে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন বিষয়ে পেশাজীবীদের বিভিন্ন ব্যানারে সভা, সমাবেশ করতে দেখা গেলেও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারার মতো কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি সরকারকে সবদিক থেকে চাপে ফেলতে চায়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীরাও মাঠে থাকলে সরকার বাড়তি চাপে থাকবে। মানুষের মধ্যেও এর প্রভাব পড়বে।
২০১১ সালে আদালতের এক রায়ের যুক্তি দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার। এখন পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়ে অনড় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ওই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন দলটির নেতারা।
এ দাবিতে জনসমর্থন বাড়াতে বিরোধীদলীয় নেতা বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করছেন। পাশাপাশি গত মাসে বিএনপি সমর্থক শিক্ষক, চিকিত্সক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এসব সভায় পেশাজীবীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া শোনার পাশাপাশি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তাঁদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছেন বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীরা।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ২৪ অক্টোবর শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি জানান, চাকরি জাতীয়করণ, শিক্ষা আইনের খসড়া বাতিল ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। দাবি আদায় না হলে মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার ধর্মঘট, অবস্থা বুঝে শিক্ষকদের ঢাকায় লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।
সরকারের শেষ সময়ে ঢাকায় এ ধরনের মহাসমাবেশ এবং লাগাতার অবস্থানের পরিকল্পনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির সমর্থক এই শিক্ষকনেতা দাবি করেন, এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। ২৩ তারিখও যদি সরকার তাঁদের দাবি মেনে নেয়, তাহলে তাঁরা রাজপথে নামবেন না। তাহলে বিএনপির চেয়ারপারসনকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, জানতে চাইলে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, তাঁরা পাঁচ বছর ধরে আন্দোলন করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা একবারও শোনেননি, বসেননি। তাই এবার বিরোধীদলীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করবে। সে সমাবেশে সারা দেশ থেকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা যোগ দেবেন বলে আশা করছেন আয়োজকেরা। ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দীন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ওই সমাবেশ ডাকা হয়েছে। সারা দেশের আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করা এ সমাবেশের উদ্দেশ্য।
শিক্ষক, আইনজীবীদের বাইরে সব পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কনভেনশন করবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। পরিষদের মহাসচিব বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ পেশাসংশ্লিষ্ট কিছু দাবিতে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। তাঁরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ কনভেনশন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু অনুমতি পাননি। পরে মহানগর নাট্যমঞ্চ চেয়েও না পেয়ে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলন করবেন। সেখান থেকে নতুন ‘ঘোষণা’ আসবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু থেকেই পেশাজীবীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের কনভেনশন রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি নয়।