জেএমবি আমিরের ছেলেসহ আটজন গ্রেপ্তার

জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আমির কারাবন্দী মাওলানা সাইদুর রহমানের ছেলে আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিম ওরফে পাখীসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দাবি, ফাহিম নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনটির একটা অংশের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাকিরা সংগঠনের সদস্য। তাঁরা হলেন মো. শফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, ইমদাদুল হক, রফিক আহম্মেদ ওরফে রয়েল, মো. মোস্তফা, মো. সাখাওয়াত উল্যাহ ও মো. আলী আশরাফ।
ডিবি জানায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় একটি মেসে পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে এই আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে জেএমবির সাংগঠনিক বিভিন্ন পুস্তিকাসহ ‘জিহাদি’ বই, প্রচারপত্র, জঙ্গি প্রশিক্ষণ ভিডিও, ১০টি মুঠোফোন ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে জানাতে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবি এখন তিন ভাগে বিভক্ত। মূল ভাগের নেতা কারাবন্দী মাওলানা সাইদুর রহমান। তাঁর নির্দেশনায় এই অংশের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ছেলে ফাহিম। ফাহিমের বিরুদ্ধে রাজশাহী ও হবিগঞ্জে একাধিক মামলা রয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তাঁরা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল-কায়েদা ও মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন বলেও ডিবি জানতে পেরেছে। তিনি বলেন, জেএমবির এই অংশের লক্ষ্য ছিল যেকোনো উপায়ে জেএমবির প্রধান সাইদুর রহমান ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা।
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, ফাহিম এর আগে ২০১২ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। নয় মাসের মাথায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। তাঁর বড় ভাই শামীম জেএমবির শুরুর দিকের নেতা ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। ২০০৭ সালে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খ আবদুর রহমানসহ পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাঁসি হওয়ার পর মাওলানা সাইদুর রহমান জেএমবির আমির হন। তিনি ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া শফিকুল ইসলাম জেএমবির সিলেট বিভাগের দায়িত্বে, রুহুল আমিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ও ইমদাদুল হক ময়মনসিংহ শহরের দায়িত্বে ছিলেন। রফিক আহম্মেদের রেস্তোরাঁ ব্যবসা আছে। তিনি জেএমবি সদস্যদের খাবার সরবরাহ ও অর্থ জোগান দিতেন। আর মোস্তফা, সাখাওয়াত উল্যাহ ও আলী আশরাফ হলেন জেএমবির গায়েরে এহসার সদস্য (সাধারণ সদস্য)। এ ছাড়া বাইরে থাকা জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মুঠোফোনে সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দেশনা নেন বলেও ডিবি কর্মকর্তারা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির চার উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মাশরেকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান ও মাহবুব আলম এবং ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন
অভিযান পরিচালনাকারী ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মাহফুজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আটজনের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। তাঁদের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে গতকাল ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।