গাছের ছায়ায় নদীর মায়ায়

রাজধানীর উপকণ্ঠে শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম ইকোপার্ক l হাসান রাজা
রাজধানীর উপকণ্ঠে শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম ইকোপার্ক l হাসান রাজা

শরতের বিকেল! বইছে মৃদুমন্দ হাওয়া। শানবাঁধানো নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা। বৈকালিক হাঁটায় বেরিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ নৌকায় করে ঘুরছেন। বেঞ্চে বসে গল্পে মশগুল অনেকে। জায়গাটা গাছগাছালিতে ঢাকা। গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে পাকা রাস্তা। এটি একটি পার্ক, নাম বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক।
শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। সবুজ বৃক্ষরাজি আর বুড়িগঙ্গা নদী মিলে পার্কটিকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম।
নদী দখল ঠেকাতে এবং পরিবেশের উন্নয়নে ২০১২ সালের অক্টোবরে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ইকোপার্কটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট ফি মাত্র পাঁচ টাকা। সপ্তাহে সাত দিনই খোলা থাকে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ; যা পার্ককে করেছে সৌন্দর্যমণ্ডিত। নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাড়ে রয়েছে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে)। দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও বসার জন্য পার্কের চারপাশে রয়েছে বেঞ্চ ও ছাউনি। এসব স্থানে বসেই দেখা যাবে নদী ও চারপাশের পরিবেশ। পার্কের দক্ষিণ পাশে নদীতে নামার জন্য রয়েছে বড় ঘাট। ঘাটে হাত-মুখ ধুচ্ছেন অনেকে। পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে নদীর পাড়ে রয়েছে একটি সেতু, যেখানে দাঁড়িয়ে নদীর রূপ দেখছেন অনেকে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, নদী সম্পর্কে জানা এবং নদী দখল ও দূষণ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতেই এ পার্ক তৈরি করা হয়েছে। পার্ক নির্মাণের আগে এ স্থানটি বেদখলে ছিল।
যাত্রাবাড়ী থেকে পরিবার নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছিলেন ফিরোজা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ইট-পাথরের শহরে জীবনকে অস্বাভাবিক করে তুলেছে। তাই নদীর তীরে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে ঘুরতে এসেছি।’
বন্ধুকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘ঢাকার উপকণ্ঠে এত সুন্দর পার্ক আমাদের মুগ্ধ করেছে। ঘাটের পানি অনেক পরিষ্কার। সেই পানিতে হাত-মুখ ধুয়েছি। নৌকায় করে ঘুরেছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর বলেন, রাজধানী থেকে পার্কে আসা-যাওয়ার সড়কটি সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে পার্কে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়বে। তা ছাড়া পার্কে দর্শনার্থী বাড়াতে ও প্রচারে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইকোপার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন দর্শনার্থী এখানে আসেন। ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেশি থাকে। তবে আজ শনিবার র্যা বের একটি অনুষ্ঠানের কারণে পার্ক বন্ধ থাকবে।
যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনা বা রিকশায় বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে যাওয়া যায়। রিকশাভাড়া ৪০-৫০ টাকা, লেগুনায় ১৫ থেকে ২০ টাকা লাগবে। এ ছাড়া গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাগামী বাসে করেও ইকোপার্কের সামনে নামা যাবে। বাসভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা।