হাজরে আসওয়াদ মাকামে ইব্রাহিম দেখছেন হজযাত্রীরা

মক্কা থেকে ফেরদৌস ফয়সাল
মক্কা থেকে ফেরদৌস ফয়সাল

মক্কার জমজম টাওয়ার ও হোটেল হিলটনের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে পবিত্র মসজিদুল হারামের মার্বেল চত্বরে এলাম। মসজিদুল হারামের অনেক প্রবেশপথ। ১ নম্বর প্রবেশপথের নাম বাদশাহ আবদুল আজিজ প্রবেশদ্বার। এই পথে সামনের দিকে এগোচ্ছি। চোখের সামনে পবিত্র কাবাঘর। মাতাফে নামলাম। কাবাঘরের চারদিকে তাওয়াফের স্থানকে মাতাফ বলে।
কাবাঘরের চারটি কোণের আলাদা নাম আছে। যেমন হাজরে আসওয়াদ, রুকনে ইরাকি, রুকনে শামি ও রুকনে ইয়ামেনি। হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোণ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী কোণ রুকনে ইরাকি, তারপর মিজাবে রহমত, এরপর হাতিম। হাতিম হলো কাবাঘরের উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার প্রাচীরঘেরা একটি স্থান। তারপর যথাক্রমে রুকনে শামি ও রুকনে ইয়ামেনি। এটা ঘুরে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে তাওয়াফের এক চক্কর পূর্ণ হয়। এভাবে একে একে সাত চক্কর দিতে হয়।
হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার উঁচুতে রাখা। প্রতিবার চক্করের সময় এতে চুম্বন করতে হয়। আমরা আল্লাহর অশেষ রহমতে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে পেরেছি। হাতিমেও বেশ কয়েকবার নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ ও দেয়াল স্পর্শ করার সৌভাগ্যও হয়েছে।
হাজরে আসওয়াদের আভিধানিক অর্থ কালো পাথর। মুসলমানদের কাছে এটি অতি মূল্যবান ও পবিত্র। হাজরে আসওয়াদ নিয়ে একটি ঘটনা সবার কম-বেশি জানা। তা হলো, পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।
আগে এটি ছিল আস্ত একটি পাথর। হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরে ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরা ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরা দেখা যায়। বড় টুকরাটি খেজুরের সমান।
ফ্রেমে মুখ ঢুকিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে হয়। এর পাশে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকে সৌদি পুলিশ। তারা খেয়াল রাখে, ফ্রেমে মাথা ঢোকাতে বা চুম্বন করতে কারও যেন কষ্ট না হয়।
অনেক হজযাত্রী মক্কায় এসে মসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিম দেখছেন। কাবা শরিফের পাশেই চারদিকে লোহার বেষ্টনীর ভেতর একটি ক্রিস্টালের বাক্সে আছে বর্গাকৃতির একটি পাথর। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান, প্রায় এক হাত। এটিই মাকামে ইব্রাহিম। মাকাম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে, দাঁড়ানোর স্থান। অর্থাৎ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান।
হজরত উমর (রা.)-এর সময় পাথরটিকে সরিয়ে বর্তমান জায়গায় বসানো হয়। মাকামে ইব্রাহিমের কাছে অনেক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন, অনবরত চলে তাওয়াফ।
ক্রেন দুর্ঘটনায় আহত আরেক বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে: মসজিদুল হারামে গত শুক্রবার ক্রেন ভেঙে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরেকজন বাংলাদেশির পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম সরদার আবদুর রব (৫৯)। তাঁর বাড়ি খুলনার তেরখাদায় এবং পাসপোর্ট নম্বর বিই ০২৮১০৮২। তিনি মক্কার বাদশাহ আবদুল আজিজ হাসপাতালের ৪০৭ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
ওই ক্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ১০৭ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে আবুল কাশেম সুফি (৪৫) নামের এক বাংলাদেশির মরদেহ মক্কার শিশা মুয়াইসিমে (মরদেহ রাখার হিমঘর) শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পশ্চিম এলাহাবাদের সুফিবাড়িতে। আহত আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (৪১) মক্কার বাদশাহ ফয়সাল শিশা হাসপাতালের ৭২৩ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর বাড়িও চট্টগ্রামে এবং পাসপোর্ট নম্বর এবি ৭২৪৬৯৮৭। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তিনিও আশঙ্কামুক্ত।
জেদ্দা বিমানবন্দর সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৮৮ হাজার ৭৪৩ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে এসেছেন।