জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচার কার্যক্রম

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আদালত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে কলাপাড়া থানা সদরের অফিস মহল্লা এলাকায় একতলা আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এই ভবনে ফৌজদারি বিচারকাজ পরিচালিত হতো। ১৯৮৬ সালে ভবনের পূর্ব পাশের অংশে ‘মুনসেফ আদালত’ (বর্তমানে দেওয়ানি আদালত) চালু হয়। এরপর ১৯৯২ সালে উপজেলা থেকে মুনসেফ আদালত সরিয়ে নেওয়া হয়। পুনরায় ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল দেওয়ানি বিচারকাজের জন্য সহকারী জজ আদালতের কার্যক্রম চালু হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আদালত ভবনটির ছাদে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ছাদের ওই সব ফাটল দিয়ে পানি চুইয়ে মেঝে ভিজে গেছে। পানি পড়ে জরুরি কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু ছাদ নয়, দেয়ালের অনেক জায়গায়ও ফাটল ধরেছে। বের হয়ে গেছে ছাদ ও বিমের রড। ভবনটির বারান্দার মেঝেসহ কয়েকটি কক্ষের মেঝে দেবে গেছে। বিচারকদের এজলাস কক্ষ দুটিও স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। সহকারী জজ আদালতের এজলাস কক্ষের বিমে ফাটল ধরেছে। ছাদের কোনো কোনো অংশ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানালার চৌকাঠ-গ্লাস ভেঙে গেছে, গ্রিলে মরিচা ধরেছে। ভবনটির ছাদসহ এর দেয়ালে শেওলা জমেছে। ভবনে থাকা হাজতখানা, পুলিশ ব্যারাক, পুলিশের উপপরিদর্শকের কক্ষ, বেঞ্চ সহকারীর কক্ষ, সেরেস্তাদারের কক্ষ ও রেকর্ড কক্ষ—সব কটির অবস্থা একই রকম।
এদিকে আদালত ভবনের এ দুরবস্থা নিয়ে তিন মাস আগে কলাপাড়া আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সভা হয়। সভায় পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুল খালেক সভাপতিত্ব করেন। ওই সভায় আদালত ভবন, বিচারকদের আবাসিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর আদালত ভবনের জীর্ণদশার কথা জানিয়ে কলাপাড়ার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে পটুয়াখালীর জেলা জজ বরাবরে আবেদন করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট করে দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছি। যেকোনো সময় ছাদ ধসে মাথায় পড়তে পারে, এই ভয় নিয়ে কাজ করি। এ ছাড়া ছাদ আর দেয়াল চুইয়ে পানি পড়ে জরুরি কাগজপত্র, মামলার নথিপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
কলাপাড়ার দেওয়ানি আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মো. আরিফুজ্জামান বলেন, একদিকে আদালত ভবনের দৈন্যদশা, অন্যদিকে কাজের পরিধি বাড়ায় পুরোনো আদলের ভবনটিতে বর্তমানে স্থান সংকুলানও হচ্ছে না। বিচারকাজ পরিচালনা করার স্বার্থে নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা জরুরি।
কলাপাড়া আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি—এ দুটি আদালতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার মামলা রয়েছে। এসব মামলার জন্য প্রতিদিন বিচারপ্রার্থীরাসহ হাজারো সাধারণ মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। তাই নির্বিঘ্ন বিচারকাজের জন্য জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন আদালত ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।