এক হওয়ার অনুমতি চেয়েছে রবি-এয়ারটেল

একীভূত হওয়ার অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশ। কাল বুধবার বিটিআরসির কমিশন সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে সই করেছেন এয়ারটেল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত দাস শর্মা এবং রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুপুন বীরাসিংহে।
এয়ারটেল ও রবির শীর্ষ পর্যায় এবং বিটিআরসি সূত্র প্রথম আলোকে ওই চিঠির দেওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
দুই কোম্পানির যৌথ চিঠিতে বলা হয়, এক হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও এনটিটি ডোকামোর কাছে, বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার ভারতী এয়ারটেলের কাছে থাকবে।
দুটি কোম্পানি একীভূত হলে গ্রাহকদের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না বলে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এতে গ্রাহকসেবা আরও উন্নত হবে। এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তিন বছর পর ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্যবসা এক করার আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশের এই দুই মোবাইল ফোন অপারেটর। এক হওয়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু করার বিষয়টি ওই দিনই এক যৌথ বিবৃতিতে তারা নিশ্চিত করেছে। যৌথ বিবৃতিতে রবি ও এয়ারটেল বলেছে, ‘দুই পক্ষের এ আলোচনা সফল হবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এ ঘোষণা উভয় প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনার উদ্যোগকে সহায়তা করবে। পরস্পরের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের আলোচনার পথকে সহজ করবে। এ বিষয়ে বিশেষ কোনো অগ্রগতি হলে আজিয়াটা ও ভারতী এয়ারটেল পরবর্তীতে ঘোষণা দেবে।’
ওই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় নানা আলোচনার পর বিটিআরসির কাছে চিঠিটি পাঠানো হয় বলে কোম্পানি দুটির সূত্রে জানা গেছে। উদ্যোগটি সফল হলে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকা রবি আজিয়াটা ও চতুর্থ অবস্থানে থাকা এয়ারটেল মিলে দ্বিতীয় অবস্থানটি দখল করবে।
এয়ারটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত দাস শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগেই আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে আগেই। সে ধারাবাহিকতায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটির প্রধান নির্বাহীদের সই করা চিঠি বিটিআরসিতে এসেছে। আগামীকাল বুধবার কমিশনের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবির গ্রাহকসংখ্যা দুই কোটি ৭৯ লাখ আর এয়ারটেলের গ্রাহকসংখ্যা ৯০ লাখ ৮০ হাজার। দুটি কোম্পানি এক হলে তিন কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক নিয়ে এটিই হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। বর্তমানে পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। তিন কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলালিংক।
রবি আজিয়াটা মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও জাপানের এনটিটি ডোকামোর যৌথ উদ্যোগ। এখানে আজিয়াটার শেয়ারের পরিমাণ ৯২ শতাংশ আর এনটিটি ডোকোমোর শেয়ার ৮ শতাংশ।
১৯৯৭ সালে একটেল নামে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে রবি। বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়ার যৌথ অংশীদারি কোম্পানি ছিল একটেল। ২০০৯ সালে এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়া আজিয়াটার কাছে রবির মালিকানা বিক্রি করে দেয়। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ ‘রবি’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে তারা।
রবির পরিশোধিত মূলধনের (পেইড-আপ ক্যাপিটাল) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন এক হাজার ৬০০ জনের বেশি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রবি।
ভারতী এয়ারটেল ২০১০ সালে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ কিনে নিয়ে এয়ারটেল বাংলাদেশ নামে ব্যবসা শুরু করে। ২০১৩ সালে বাকি ৩০ শতাংশ কিনে নেয় ভারতী এয়ারটেল। ভারতী এয়ারটেল এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ২১ টির দেশে ৩০ কোটির বেশি গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুঠোফোন অপারেটর। এখানে মোট কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। এয়ারটেল বাংলাদেশে কর্মরত জনবলের সংখ্যা ৫০০ জনের বেশি।