ওরা জড়িত নয়, দাবি স্বজনদের

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) গ্রেপ্তার করা মিনহাজুল আরিফিন ওরফে রাসেল (৪০), শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ (৩৫), রাসেল চৌধুরী (৩৫) ও তামজিদ আহম্মেদ ওরফে রুবেল (৩৫) ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাঁদের স্বজনেরা।
মিনহাজুল আরিফিন সপরিবারে রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় থাকেন। তাঁর বাবা সিরাজুল ইসলাম গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, মিনহাজুল পুরোনো আসবাবের ব্যবসা করেন। ১২ অক্টোবর এলাকার রাস্তা থেকে ডিবি পরিচয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিতে গেলে বলা হয়, মিনহাজুল নামের কাউকে আটক করা হয়নি। তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে ১৬ অক্টোবর বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর তিন ছেলে-চার মেয়ের মধ্যে মিনহাজুল সবার ছোট। বছর পাঁচেক আগে মিনহাজুলকে বিয়ে করানো হয়। এর তিন মাস পর মিনহাজুলের স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি পাবনার মানসিক হাসপাতালে আছেন। স্ত্রীর অসুস্থতার পর মিনহাজুল মাদকসক্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে স্থানীয় একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়েছে। দেড় বছর আগে পাঁচটি ইয়াবা রাখার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, মিনহাজুল মাদক ব্যবসায় জড়িত নন। মানুষ খুন করা তো দূরের কথা, মুরগি জবাই করার মতো সাহসও তাঁর নেই। গতকাল টিভি দেখে ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বলির পাঁঠা হয়েছেন। ছেলে গ্রেপ্তারের খবরে মিনহাজুলের পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
গ্রেপ্তার করা শাখাওয়াত হোসেনও মধ্য বাড্ডায় থাকতেন। গতকাল রাতে বাড়িটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। তবে পাশেই আরেকটি বাড়ি আছে তাঁদের। ওই বাড়িতে থাকেন তাঁর ভাই মো. সোহাগ। তিনি বলেন, ১৪ অক্টোরব রাতে মোটরসাইকেলসহ শাখাওয়াতকে ডিবি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যায় কয়েকজন ব্যক্তি। এরপর ডিবি কার্যালয়ে গেলে বলা হয়, ডিবি শাখাওয়াতকে আটক করেনি।
সোহাগ বলেন, মধ্য বাড্ডায় তাঁদের একাধিক বাড়ি আছে। এসব বাড়ির ভাড়া তুলে শাখাওয়াত চলতেন। শাখাওয়াত স্থানীয় বিএনপির কর্মী। দুই বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি আর বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, গতকাল টিভিতে শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তারের কথা জেনেছেন। এতে তিনি বেঁচে আছেন দেখে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তাঁদের পরিবার। তবে তিনি মনে করেন, তাঁর ভাই নির্দোষ। এলাকার মানুষের বিভিন্ন ধরনের উপকার করতেন তিনি।
রাসেল চৌধুরীকে ১০ অক্টোবর দক্ষিণ বাড্ডার বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তাঁর মা আফরোজা আক্তার বলেন, রাসেল বিএনপির সমর্থক, কোনো পদে নেই। বিএনপির মিছিল-সমাবেশে যেতেন। আগে বিদ্যুৎ বিভাগে ঠিকাদারি করলেও কয়েক বছর ধরে বেকার। এলাকায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা আছে। এ ছাড়া কোনো থানায় জিডি বা মামলা নেই। তিনি মনে করেন, তাঁর ছেলে মানুষ খুনে জড়িত নন। রাসেলের বাবা শাহজাহান চৌধুরী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী।
তামজিদ আহম্মেদের মা শিরিজান বেগম ও মামা তৌহিদ মিয়া বলেন, ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তামজিদ নিখোঁজ ছিলেন। বিভিন্ন স্থানে ও ডিবি কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর সন্ধান মেলেনি। পরে নিখোঁজের ঘটনায় বাড্ডা থানায় জিডি করা হয়। গতকাল টিভিতে দেখেছেন, তামজিদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা বলেন, তামজিদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলা কিংবা জিডি নেই। তাঁরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করেন না, তামজিদ মানুষ খুন করেছেন।
তৌহিদ মিয়া বলেন, চার বছর বয়সে তামজিদের বাবা মারা যান। এরপর তাঁর কাছে বেড়ে ওঠেন তিনি। মুঠোফোন মেরামত ও বৈদ্যুতিক কাজ করতেন তিনি। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। গ্রেপ্তারের খবর জেনে তামজিদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
সিজার হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে তদন্তকারীদের শনাক্ত করা তামজিদ ও রাসেল চৌধুরীর বিষয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে সিজারকে (৫১) গুলি করে হত্যা করা হয়।