কোটি টাকার কাজ কোটেশনে!

শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজের সামনে এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী l ছবি: প্রথম আলো
শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজের সামনে এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী l ছবি: প্রথম আলো

স্থাপনাগুলো ‘সেমিপাকা আসাম’ আদলের। প্রায় শত বছরের পুরোনো। জরাজীর্ণ হওয়ায় ভেঙে পাকা ভবন হবে। প্রাঙ্গণে রাখা হয়েছে ইট-পাথর-বালুসহ যাবতীয় নির্মাণসামগ্রী। নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও তৈরি করা।
সিলেট নগরের কেওয়াপাড়ায় শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছরের মাথায় এ উন্নয়ন-আয়োজন দেখে সবার মনে একধরনের আনন্দ হিল্লোল বইছিল। কিন্তু কাজ শুরুর সপ্তাহ খানেক পর সব আনন্দ থেমে যায়। টিনশেড স্থাপনার একাংশ ভাঙা, নির্মাণসামগ্রীও এখন ঠায় ফেলে রাখা। কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল থলের বিড়াল।
কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেছিল কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে। এলাকাবাসী, সংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষানুরাগীদের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত কোটেশনপ্রথা বাতিল করে তারা। এখন দরপত্র-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়ায় থমকে আছে সব কাজ।
সংস্কৃত কলেজ বাংলাদেশে একটিই। নগরের কেওয়াপাড়ায় ১০০ শতক জায়গাজুড়ে এর অবস্থান। একদিকে বেতার বাংলাদেশের সিলেট কেন্দ্র, অন্যদিকে ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃত শিক্ষা আর আয়ুর্বেদিক শিক্ষার একটি ডিপ্লোমা কোর্স চলায় দেশে এমনকি ভারত থেকেও এখানে পড়াশোনা করতে আসেন শিক্ষার্থীরা। সংস্কৃত ও আয়ুর্বেদিক বিভাগে প্রতিবছর শতাধিক শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন শিক্ষা গ্রহণ করেন এখান থেকে।
কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া সবাই অবৈতনিক হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অনেকটা সেবা প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার দাশ চৌধুরী পরিচালনা পর্ষদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা কমিটি সম্প্রতি বৈঠক করে পুরোনো ভবনের একাংশ ভেঙে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের নতুন দোতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
নাম প্রকাশ না করে কলেজসংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, পরিচালনা কমিটির ওই বৈঠকে নতুন ভবন নির্মাণকাজের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় এক কোটি টাকা। কলেজের নিজস্ব তহবিল ও আয়ুর্বেদিক বিভাগের এককালীন অর্থ বরাদ্দ থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ-ও সিদ্ধান্ত হয়, নির্মাণসামগ্রী ক্রয় ও নির্মাণকাজ তদারক করবে সরাসরি পরিচালনা কমিটি। এভাবে কাজ শুরু করতে গিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে তারা দরপত্র-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়। দরপত্র-প্রক্রিয়ার এ কাজ সরাসরি এখন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর করছে।
২৫ অক্টোবর কলেজ চত্বরে গেলে কেওয়াপাড়ার অনেকেই কোটি টাকার নির্মাণকাজ কোটেশনে শুরু করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিচালনা কমিটিতে থাকা একজন সদস্য বলেন, বিধি অনুযায়ী এক লাখ টাকার নিচে যেকোনো কাজ কোটেশনের মাধ্যমে করা যায়। কিন্তু প্রায় কোটি টাকার কাজ করতে গিয়ে বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর পেছনে সৎ কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্মাণকাজ কোটেশনে শুরু আবার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে গুটানো—দুই বিষয়েরই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার দাশ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৫৫ লাখ টাকার এককালীন একটি আর্থিক অনুদান পেয়েছি। এ টাকার সঙ্গে আমাদের কলেজ তহবিলের সংগৃহীত টাকা দিয়ে নির্মাণকাজ করতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। পরিচালনা কমিটির তদারকির মাধ্যমে কাজ করলে কম টাকায় বেশি কাজ করা যেত বলে ধারণা ছিল। পরে দেখা গেল এ নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই দরপত্রের মাধ্যমে কাজ সম্পন্নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীগুলো কাজ শুরুর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে করা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ শুরু করলে এ কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’