মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল, নতুন পরীক্ষার সুপারিশ

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের আবার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ফাইল ছবি
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের আবার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ফাইল ছবি

মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সুপারিশ করেছে গণতদন্ত কমিটি। আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিটি বলেছে, মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও বাণিজ্যিক তৎপরতা ছিল।
মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস-বিষয়ক গণতদন্ত কমিটি সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থী পাওয়ার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকার স্বার্থে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন ও যোগ্য শিক্ষার্থীর প্রয়োজন ছিল। পাস নম্বর কমিয়ে দেওয়া, প্রশ্ন সহজ করা ও প্রশ্ন ফাঁস করার মাধ্যমে সেই কাজটি করা হয়েছে। একজনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চলমান আন্দোলন ঠেকাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর ছেলে ফোনে হুমকি দিয়েছেন। কমিটি ৩০ অক্টোবর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বক্তব্য, অনুসন্ধান, সাক্ষাৎকার, ফেসবুক ও অনলাইন থেকে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, পরীক্ষা পদ্ধতির ১১টি ধাপের ছয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিভাগে হয়ে থাকে। যথাযথ নজরদারি না হলে প্রশ্নপত্র পাচার হওয়ার আশঙ্কা এখানেই সবচেয়ে বেশি। মেধাক্রমে এগিয়ে থেকেও অপেক্ষমাণ তালিকায় পরীক্ষার্থীর নাম থাকা, শুধু পাস নম্বর পেয়েও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত তালিকায় সেই ক্রমিক নম্বর থাকা, একই নম্বর পাওয়া একাধিক পরীক্ষার্থীর এলোমেলো মেধাক্রম পরীক্ষা পদ্ধতির অসঙ্গতির বিষয়টি স্পষ্ট করে। এ ছাড়া ঢাকা, সলিমুল্লাহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও বারডেম মেডিকেল কলেজে ভর্তির চেষ্টা করেছে—এমন ১২ জন শিক্ষার্থীকেও শনাক্ত করেছে কমিটি। 

কমিটি প্রতিবেদনে ফেসবুকের যে পেজটিতে ১৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়, যে ই-মেইল ঠিকানা থেকে প্রশ্ন বিনিময় হয়েছে, সেগুলোর নমুনা দিয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
যাঁরা আগে ভর্তি হয়েছেন, নতুন করে পরীক্ষা নিলে তাঁদের কী হবে—জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল যে মাত্র ৪৪ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নপত্র পেয়েছে, সে ক্ষেত্রে ছয় লাখ শিক্ষার্থীকে কেন আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। জবাবে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, বেআইনি তৎপরতার যদি একটি ঘটনাও পাওয়া যায়, তাহলে তা সামগ্রিকভাবে পরীক্ষার পবিত্রতা নষ্ট করে।
কমিটি জানায়, ৫ নভেম্বর পর্যন্ত যেকোনো দিন যেকোনো জায়গায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছিল তারা। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখন এসব জায়গায় পৌঁছানো হবে বলে জানানো হয়।
কমিটির সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ কামাল, মোশাহিদা সুলতানা ও সামিনা লুৎফা, চিকিৎসক ফজলুল হক ও শাকিল আক্তার, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফিদা হক, শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু এবং লেখক-সম্পাদক রাখাল রাহা।
আরও পড়ুন : প্রশ্ন ফাঁস তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি
মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুকদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈঠক