পৌরসভায় ইউনিয়নের সেবাও মেলে না!

ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। ১৭ বছর আগে (১৯৯৮ সাল) উন্নীত হয় পৌরসভায়। তারপর তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তরণ ২০১৩ সালে। কিন্তু নাগরিকদের জীবনমান শুরুতে যেমন ছিল, এখনো তাই। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরবাসীর।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক-লাগোয়া শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার আয়তন ১০ দশমিক ৪০ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ২৬ হাজার ৬৭৯ জন। ভোটার আছেন ১৫ হাজার ১৯৭ জন। এখন পর্যন্ত পৌরসভার নিজস্ব কোনো ভবন নেই, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একটি গুদাম ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম।
এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রাজ্জাক (রাজা মিয়া)। পরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যান হন মো. ময়না মিয়া। তাঁর মৃত্যুতে ২০০৬ সালের উপনির্বাচনে মেয়র হন ছেলে ফরিদ আহমেদ ওরফে অলি। তিনি ২০১০ সালে নির্বাচিত হয়ে বর্তমান মেয়র পদে রয়েছেন এবং এবারও বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন।
বেহাল রাস্তা ও যানজট: পৌরসভার প্রায় ৯৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাকা ও ভালো সড়ক মাত্র ২৩ কিলোমিটার। বাকি সড়কগুলো কাঁচা ও ইট বিছানো। এসবের অধিকাংশই পড়ে আছে সংস্কারের অভাবে। কোথাও কার্পেটিং উঠে গেছে, কোথাও গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। প্রশস্ততা কম ও আঁকাবাঁকা সড়ক। শহরের ভেতরে ড্রাইভার বাজার এলাকায় সড়কের ওপরই রয়েছে গাড়ির স্ট্যান্ড। এর জন্য যানজট লেগেই থাকে সব সময়। তা ছাড়া প্রধান সড়কের ওপরই আছে কাঁচাবাজার। এসব সমস্যার কারণে নাগরিকেরা নিয়মিত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। পৌর এলাকার বাসিন্দা সাইদুর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তা থেকে গাড়ির স্ট্যান্ড ও কাঁচাবাজার না সরানোয় ষ্টেশন এলাকা ও দাউদনগর বাজারে সবসময় যানজট থাকে।
আবাসিক পানি সরবরাহ নেই: পৌরবাসীর জন্য আবাসিক পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা বা প্রকল্প না থাকায় সবাই নলকূপের (টিউবওয়েল) পানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। দাউদনগর এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফ বলেন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাটা যে পৌরসভার দায়িত্ব—এ কথা অনেকে জানেই না।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব: পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। যে যেখানে পারছেন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ তৈরি করছেন। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন এলাকায় সরকারি জায়গার ওপর ও জলাধারে ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে সমানে। পয়োনিষ্কাশন-সুবিধা নেই বললেই চলে। ১০ বর্গকিলোমিটারের এ পৌরসভায় ড্রেন আছে মাত্র ৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার। পয়োনিস্কাশনের জন্য শহরের একটি নালার সঙ্গে আরেকটির কোনো সংযোগ নেই। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি নালা উপচে পড়লে জনদুর্ভোগ বাড়ে। শহরের ড্রাইভার বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ জংশন স্টেশন, দাউদনগর বাজার সড়কে এখনো কোনো পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না। পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি মাদ্রাসা, চারটি কওমি মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, পাঁচটি উচ্চবিদ্যালয় ও সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে পৌরসভার কোনো পরিকল্পনাও নেই। পৌর এলাকায় মাত্র তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও তা থেকে উন্নত কোনো চিকিৎসাসেবা মেলে না। স্থানীয় শিক্ষক আজমল আহমেদ বলেন, এখানকার মানুষ জেলা সদরে অবস্থিত জেলা আধুনিক হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।
রাজস্ব আদায়: শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা গত অর্থবছরে ১ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকার রাজস্ব (পৌর করসহ) আদায় করেছে। প্রতিবছরই রাজস্ব আদায় ভালো। এ সাফল্যের কারণেই দ্রুত এ পৌরসভা প্রথম শেণির মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ওসমান আলী অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদ থাকা অবস্থায় সুযোগ-সুবিধা যেমন ছিল, এখনো তাই আছে। জন্ম-মৃত্যুর সনদ দেওয়া ছাড়া এ পৌরসভা আর কোনো কাজ করছে বলে মনে হয় না।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সচিব মো. মাহবুব আলম পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সড়ক উন্নয়ন, নর্দমাব্যবস্থা ও ৪৪৫টি সড়কবাতির মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছেন। পানি সরবরাহসহ কিছু কিছু সমস্যা আছে, তবে এগুলো শিগগিরই দূর করা সম্ভব হবে।