বিমান হামলায় নিহত আইএসের প্রধান হ্যাকার বাংলাদেশি জঙ্গি

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী সামরিক জোট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের বিমান হামলায় নিহত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ১০ গুরুত্বপূর্ণ নেতার একটি তালিকা গত মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় একজন বাংলাদেশির নামও রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে পড়াশোনা করা এক কম্পিউটার প্রকৌশলী। তাঁর নাম সাইফুল হক ওরফে সুজন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও এনপিআরের।
আইএসবিরোধী ওই সামরিক জোটের শীর্ষ মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন বলেন, ৭ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ইরাক ও সিরিয়ায় বিমান হামলায় এই ১০ জন নিহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১০ ডিসেম্বর আইএসের কথিত রাজধানী সিরিয়ার রাকা প্রদেশের কাছে বিমান হামলায় সাইফুলের মৃত্যু হয়। তিনি আইএসের হয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের পরিকল্পনাকারী, হ্যাকিং কর্মকাণ্ড, নজরদারি প্রতিরোধ প্রযুক্তি ও অস্ত্র উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
খবরে বলা হয়, সাইফুল হক ২০০৩ সালে শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাজ্যে যান। পরে সেখানে অভিবাসনের জন্য আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হন। সাইফুলের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য যাচাই না করে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক টম ওয়াইক গতকাল একাধিক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, সাইফুল ১০ বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কার্ডিফে ছিলেন। ওই বছর ভিসার আবেদন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করলে তিনি সিরিয়ায় চলে যান। সাইফুল সিরিয়ায় আবু খালিদ আল-বাঙালি নামে পরিচিত ছিলেন। আইএসের আরেক ব্রিটিশ জঙ্গি জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। জুনায়েদের মৃত্যুর পর সাইফুল এই জঙ্গিগোষ্ঠীর হ্যাকিং দলের হাল ধরেন।
টম ওয়াইক লিখেছেন, সাইফুলের বয়স ৩১। তবে অন্য পশ্চিমা গণমাধ্যমে তাঁর বয়স ৩৪ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি এক্সপ্রেসও একই ধরনের খবর দিয়েছে। পত্রিকাটির খবরে কর্নেল স্টিভ ওয়ারেনের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, সাইফুলের মৃত্যুতে আইএস তার হ্যাকিং কর্মকাণ্ড, নজরদারি প্রতিরোধ প্রযুক্তি ও অস্ত্র তৈরির কাজের নেটওয়ার্কগুলোর ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হারিয়েছে।
প্যারিসে হামলায় সংযোগ ছিল দুজনের: যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বেতার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর (এনপিআর) খবরে বলা হয়, বিমান হামলায় নিহত যে ১০ জন আইএস নেতার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত দুজনের সঙ্গে ১৩ নভেম্বর প্যারিসে হামলাকারীদের যোগাযোগ ছিল বলে মার্কিন সামরিক জোটের মুখপাত্র স্টিভ ওয়ারেন জানিয়েছেন।
প্যারিসে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জনের প্রাণহানি হয়। আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করে।
স্টিভ ওয়ারেন বলেন, নিহত আইএস নেতাদের মধ্যে একজনের নাম শারাফে আল মুদান। তিনি সিরিয়াভিত্তিক একজন আইএস কমান্ডার ছিলেন, যাঁর সঙ্গে প্যারিসের মূল হামলাকারী আবদেল হামিদ আবাউদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। মুদানের মৃত্যু হয় ২৪ ডিসেম্বরের এক বিমান হামলায়। এর দুই দিন পর ইরাকের মসুলে আরেক হামলায় নিহত হন আবদুল কাদের হাকিম নামে আরেক আইএস কমান্ডার। তাঁর সঙ্গেও প্যারিসের হামলাকারীদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
নিহত বাকি সাত আইএস নেতার মধ্যে তাশিন আল হাইয়ালি আইএসের বহির্বিশ্বে কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ২৭ ডিসেম্বর মসুলে নিহত হন। ১২ ডিসেম্বর ইরাকের তাল আফার এলাকায় নিহত হন আকরাম মোহাম্মদ সা’দ ফারিস ওরফে আকরাম আবু। তিনি আইএসের শিরশ্ছেদকারী দলের একজন কমান্ডার ছিলেন। ৯ ডিসেম্বর ইরাকের কিরকুক প্রদেশে আইএসের ডেপুটি আমির মিথাক নাজিম পার্শ্ববর্তী হাউয়িজাহ এলাকায় বিমান হামলায় নিহত হন। একই দিন মসুলে নিহত হন সেখানে আইএসের অর্থবিষয়ক ডেপুটি আমির ইউনুস খালাশ ওরফে আবু জাওদাত। তার আগে ৮ ডিসেম্বর কিরকুকের কাছে নিহত হন আবু আনাস, যিনি হাতে তৈরি বোমার (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি) বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
এ ছাড়া ৭ ডিসেম্বর নিহত হন আইএসের আরও দুই নেতা। তাঁদের মধ্যে রাওয়ান্দ দিলশার আইএসের বহির্বিশ্ব কর্মকাণ্ডের নেতা ছিলেন। আর খলিল আহমেদ আলী আল-ওয়াইস ওরফে আবু ওয়াদাহ কিরকুক প্রদেশে আইএসের আমির ছিলেন। এঁরা নিহত হয়েছেন যথাক্রমে সিরিয়ার রাকা ও ইরাকের হাউয়িজাহ এলাকায়।