শর্ত না মানলে ব্লাড ব্যাংক বন্ধ

শর্ত না মেনে যেসব রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র (ব্লাড ব্যাংক) রক্ত কেনাবেচা করছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ হলো, বেশির ভাগ কেন্দ্রই অনিরাপদ রক্ত বেচাকেনা করে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করছে।
ঢাকায় দুই ধরনের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে এক প্রকার রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত। অন্যগুলো হাসপাতালের বাইরে শুধু রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত পরিসঞ্চালন-সংক্রান্ত শর্ত মানে না। এগুলোই বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাজধানীতে এখন প্রায় ৪০টি এ ধরনের কেন্দ্র রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক শামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রগুলো থেকে রোগীরা প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করুন। ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এখন স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা রক্ত দিচ্ছেন। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, হাসপাতালের বাইরের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রগুলো পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করছে। এসব রক্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপদ নয়। যেসব কেন্দ্র শর্ত মানছে না, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি।’
বন্ধ করে দেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমরাও চাই না শর্ত না মেনে কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হোক। আমরা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমন যেকোনো কাজের বিরোধী।’
নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা যাবে না। দাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহের পর ক্রস ম্যাচিংসহ এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি রোগের জীবাণুর অনুপস্থিতি নিশ্চিত না করে রক্ত, রক্তের উপাদান ও রক্তজাতসামগ্রী সরবরাহ, বিক্রি বা বিতরণ করা যাবে না। এ ছাড়া অবকাঠামোগত কিছু শর্তও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য ল্যাবরেটরিটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা। রক্ত সংরক্ষণকক্ষের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে রাখা। ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে হবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র্যা ব রাজধানীর বেশ কয়েকটি ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে দেখেছে, এই কেন্দ্রগুলো আসলে শর্ত মানছে না। শুধু রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সম্প্রতি এমন চারটি কেন্দ্র বন্ধ করে ১১ লাখ টাকা জরিমানা ও একজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেন্দ্রগুলো হলো হলি ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক ও ট্রান্সফিউশন, রিদম ব্লাড ব্যাংক, জেনারেল ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক এবং ডাক্তার এজি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হলি ক্রিসেন্টে এক ব্যাগ রক্তের সঙ্গে স্যালাইন মিশিয়ে তিন ব্যাগ করা হচ্ছিল। এ ছাড়া সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই রক্ত রাখা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট পাওয়া গেছে খোলা জায়গায়। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অপরীক্ষিত রক্ত পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, রক্তবাহিত বিভিন্ন রোগ এইডস, লিভার ক্যানসার, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়ার কারণ হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া রক্ত নেওয়া। সরকারি হাসপাতালগুলোয় পাঁচ ধরনের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রগুলোর কোনটি কীভাবে চলছে, তা খতিয়ে দেখতে নজরদারি বাড়ানো দরকার।