তদন্তে কোনো প্রশ্নের উত্তর মেলেনি

.
.

এক বছরেও চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা অঞ্জলী রানী দেবী খুনের মামলার কোনো কিনারা হয়নি। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে এলেও কারা, কী কারণে তাঁকে হত্যা করেছে—এ নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। শনাক্ত করা যায়নি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবকদেরও।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন ব্লগার হত্যার ধরনের সঙ্গে অঞ্জলী রানী হত্যার মিল রয়েছে। তবে অঞ্জলী হত্যার দায় কেউ স্বীকার করেনি। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চার যুবক হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। ওই ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে অঞ্জলীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
গত বছরের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের তেলিপট্টি এলাকার নিজ বাসার গলির মুখে অঞ্জলী রানী দেবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নার্সিং কলেজে যাওয়ার জন্য তিনি সেদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করা হয়। ঘটনার দুদিন পর মামলাটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
খুনের ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন অঞ্জলীর স্বামী ও মামলার বাদী চিকিৎসক রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর মুঠোফোনে তাঁকেও হুমকি দেয় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। কারা তাঁকে হুমকি দিয়েছে, তাও বের করতে পারেনি পুলিশ। ভয়ে-আতঙ্কে চট্টগ্রাম নগরের বাসা ছেড়ে বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি হাটহাজারীর গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কেশব চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার ধরন দেখে বোঝা গেছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু কারা, কী কারণে তাকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত অব্যাহত আছে। ধর্মীয়, পারিবারিক ও পেশাগত দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উগ্রপন্থী কোনো জঙ্গি সংগঠন এ কাজ করেছে কি না, তা-ও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার পর জড়িত সন্দেহে পটিয়া জামিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাকে (৪৮) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রীকে কেন কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না তিনি। পারিবারিক ও পেশাগত বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা নেই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা ছিনতাইকারী নয় বলেই মনে করেন তিনি। কারণ, তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকা মুঠোফোন ও টাকা কিছুই তাঁরা নেননি। হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল জলিল মণ্ডল জানান, অঞ্জলী হত্যাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। গত এক বছরে পুলিশ জেএমবি থেকে শুরু করে অনেক সূত্রহীন মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। এ মামলাটি নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। তবে হাল ছাড়েননি জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, খুনিদের শনাক্ত করা যাবে।
চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এক বছরেও অঞ্জলী হত্যার কোনো কিনারা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা খুনিদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
কলেজের শিক্ষার্থী সুফিয়া সুলতানা বলেন, ‘হিজাব পরা না পরা নিয়ে ২০১২ সালে কলেজে একবার আন্দোলন হয়েছিল। তাতে অঞ্জলী ম্যাডামের কোনো ভূমিকা ছিল না।’ তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ মিনারা খানম বলেন, ‘এক বছর ধরে শুনে আসছি তদন্ত এগোচ্ছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখছি না। বিচার তো দূরের কথা, খুনিকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। কলেজের কারও সঙ্গে তাঁর (অঞ্জলী) দ্বন্দ্ব ছিল না। তাঁকে কেন মেরে ফেলা হয়েছে বুঝতে পারছি না। রোববার কলেজে মানববন্ধন ও আলোচনা সভার মাধ্যমে খুনিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হবে।’

চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী দেবী হত্যার এক বছর কাল

তদন্তে কোনো প্রশ্নের উত্তর মেলেনি

এক বছরেও চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা অঞ্জলী রানী দেবী খুনের মামলার কোনো কিনারা হয়নি। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে এলেও কারা, কী কারণে তাঁকে হত্যা করেছে—এ নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। শনাক্ত করা যায়নি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবকদেরও।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন ব্লগার হত্যার ধরনের সঙ্গে অঞ্জলী রানী হত্যার মিল রয়েছে। তবে অঞ্জলী হত্যার দায় কেউ স্বীকার করেনি। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চার যুবক হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। ওই ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে অঞ্জলীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

গত বছরের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের তেলিপট্টি এলাকার নিজ বাসার গলির মুখে অঞ্জলী রানী দেবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নার্সিং কলেজে যাওয়ার জন্য তিনি সেদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করা হয়। ঘটনার দুদিন পর মামলাটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

খুনের ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন অঞ্জলীর স্বামী ও মামলার বাদী চিকিৎসক রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর মুঠোফোনে তাঁকেও হুমকি দেয় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। কারা তাঁকে হুমকি দিয়েছে, তাও বের করতে পারেনি পুলিশ। ভয়ে-আতঙ্কে চট্টগ্রাম নগরের বাসা ছেড়ে বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি হাটহাজারীর গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কেশব চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার ধরন দেখে বোঝা গেছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু কারা, কী কারণে তাকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত অব্যাহত আছে। ধর্মীয়, পারিবারিক ও পেশাগত দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উগ্রপন্থী কোনো জঙ্গি সংগঠন এ কাজ করেছে কি না, তা-ও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার পর জড়িত সন্দেহে পটিয়া জামিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাকে (৪৮) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রীকে কেন কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না তিনি। পারিবারিক ও পেশাগত বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা নেই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা ছিনতাইকারী নয় বলেই মনে করেন তিনি। কারণ, তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকা মুঠোফোন ও টাকা কিছুই তাঁরা নেননি। হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল জলিল মণ্ডল জানান, অঞ্জলী হত্যাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। গত এক বছরে পুলিশ জেএমবি থেকে শুরু করে অনেক সূত্রহীন মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে। এ মামলাটি নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। তবে হাল ছাড়েননি জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, খুনিদের শনাক্ত করা যাবে।

চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এক বছরেও অঞ্জলী হত্যার কোনো কিনারা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা খুনিদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

কলেজের শিক্ষার্থী সুফিয়া সুলতানা বলেন, ‘হিজাব পরা না পরা নিয়ে ২০১২ সালে কলেজে একবার আন্দোলন হয়েছিল। তাতে অঞ্জলী ম্যাডামের কোনো ভূমিকা ছিল না।’ তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।

কলেজের অধ্যক্ষ মিনারা খানম বলেন, ‘এক বছর ধরে শুনে আসছি তদন্ত এগোচ্ছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখছি না। বিচার তো দূরের কথা, খুনিকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। কলেজের কারও সঙ্গে তাঁর (অঞ্জলী) দ্বন্দ্ব ছিল না। তাঁকে কেন মেরে ফেলা হয়েছে বুঝতে পারছি না। রোববার কলেজে মানববন্ধন ও আলোচনা সভার মাধ্যমে খুনিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হবে।’