তদন্তে আসছে গ্রামের বিরোধও

অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী (মুকুল নামে পরিচিত) হত্যার প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে গত বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চ’ তৈরি করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা l ছবি: প্রথম আলো
অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী (মুকুল নামে পরিচিত) হত্যার প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে গত বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চ’ তৈরি করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা l ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তকাজে গ্রাম্য বিরোধের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠেছে। খুনের ঘটনার পর এই বিরোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক একজন কাউন্সিলর আত্মগোপন করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক শিবিরনেতা হাফিজুর রহমানকে গতকাল বৃহস্পতিবার চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালত-১-এর বিচারক মোকসেদা আজগর এই আদেশ দেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় আরও গ্রেপ্তার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দরগামাড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম রায়হান আলী ও রাজশাহী নগরের মতিহার থানা এলাকার শিবিরকর্মী খায়রুল ইসলামকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত আগামী সোমবার রিমান্ডের আবেদন শুনানির দিন ধার্য করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শিক্ষক রেজাউল করিমের নিজ গ্রাম দরগামাড়িয়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের চারটি খাসপুকুর জালিয়াতির মাধ্যমে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও দরগামাড়িয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী খাজাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান ওরফে মজনু নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন। এতে তাঁর সঙ্গে গ্রামবাসীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। পুকুরগুলোর একটির কিছু অংশ রেজাউল করিমের মালিকানায় ছিল। তিনি খুন হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কয়েক দফা ওই সাবেক কাউন্সিলরের বাড়িতে হানা দিয়েছেন, কিন্তু ধরতে পারেননি। খুনের ঘটনার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
নিহত শিক্ষকের ছোট ভাই সিরাজুল করিম সিদ্দিকী জানান, পুকুর নিয়ে মামলা চলছিল। এ বিষয়ে তাঁর ভাই আদালতে গিয়ে খোঁজখবর নিতেন। তবে তাঁকে হত্যার পেছনে এটি কারণ কি না, সে সম্পর্কে জানেন না।
ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডল বলেন, ‘মজনুর জালিয়াতির বিষয় প্রকাশ পাওয়ার পর গ্রামবাসীর পক্ষে আদালতে গিয়ে বিষয়টির খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য মুকুল সাহেবকে (রেজাউল করিম এলাকায় মুকুল নামে পরিচিত) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’
খাজাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন জানান, তিনি নিজ গ্রামের পক্ষে ও রেজাউল করিম দরগামাড়িয়া গ্রামের পক্ষে গিয়ে মামলার খোঁজখবর নিতেন এবং তদবির করতেন। এতে মজুন কাউন্সিলর তাঁদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক রেজাউল সাদিক বলেন, তদন্তে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গ্রামের বিরোধকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তবে মতিউর রহমান মজনুর বাড়িতে অভিযান চালানোর কথা অস্বীকার করেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মজনুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যরাও কিছু বলেননি। তাঁর সঙ্গে দুটি মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রতিবাদ অব্যাহত: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, রেজাউল করিম হত্যার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে গতকালও মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সিনেট ভবনের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু রেজাউল করিম হত্যায় আজ পুরো দেশ উত্তাল। সেখানে আমরা ঘুমিয়ে থাকতে পারিনি। তাই জরুরি সভা ডেকে আন্দোলনে নেমেছি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করব, যত দিন না খুনিদের শাস্তি হয়।’
এদিকে পঞ্চম দিনের মতো গতকাল বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের শিক্ষার্থী এবং নেতা-কর্মীরা মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে সমাবেশে করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় এবং র্যাব-৫-এর কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গত ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় শিক্ষক রেজাউলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।