পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার পর হকার উচ্ছেদ : সাঈদ খোকন

>
সাঈদ খোকন
সাঈদ খোকন
এক বছর পূর্ণ করলেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র। ২০১৫ সালের ৬ মে শপথ নিয়েছিলেন তাঁরা। নাগরিকদের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা, গত এক বছরে সেগুলোর কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, কাজ করতে গিয়ে তাঁরা কী কী বাধার মুখে পড়ছেন—এসব বিষয়ে জানতে প্রথম আলো দুই মেয়রের মুখোমুখি হয়। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের দাবি, ই-টেন্ডার চালু করে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন তিনি, সিটি করপোরেশনে রাজনৈতিক মাস্তানি বন্ধ করেছেন। আর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, দলের লোকজন মনঃক্ষুণ্ন হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তাঁর উল্লেখযোগ্য সাফল্য

প্রথম আলো: যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনি ভোট চেয়েছেন, এই এক বছরে তার কতটা রক্ষা করতে পেরেছেন?

সাঈদ খোকন: যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এই এক বছরে সেগুলো বাস্তবায়নের ডাইরেকশনটা আমরা মোটামুটি নির্ধারণ করতে পেরেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক অবস্থা বোঝা, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা—এসব মোটামুটি করা গেছে। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন ডিপিডিসির লোকজন এল বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে। কারণ, বিল পরিশোধ করা হয়নি। আমি মন্ত্রীকে অনুরোধ করে, কিছু অর্থ পরিশোধ করে সংযোগ রক্ষা করি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছিল। আমার দায়িত্ব গ্রহণের সময় সিটি করপোরেশনের দেনা ছিল প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকার মতো পরিশোধ করতে পেরেছি।

প্রথম আলো: এ রকম দেনাগ্রস্ত সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে কীভাবে সেবা দেবে?

সাঈদ খোকন: তার আগে একটু বলি, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা হয়নি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের যে মোট রাজস্ব আয় ছিল, এখন তার ৬৫ শতাংশ আদায় করে ঢাকা উত্তর, আমরা করি মাত্র ৩৫ শতাংশ। কিন্তু অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন স্থায়ী অপারেটিং ব্যয় বাবদ মোট যত টাকা খরচ করত, তার ৬৫ শতাংশ ব্যয় করি আমরা, আর ৩৫ শতাংশ করে ঢাকা উত্তর।

প্রথম আলো: তাহলে আপনারা স্বাবলম্বী হবেন কী করে? পরিকল্পনা আছে?

সাঈদ খোকন: সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯-এর বিধিমালা অনুযায়ী বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর আরোপ করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সিটি করপোরেশনের সীমানার মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর কর আরোপ করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। আমাদের এলাকার মধ্যে সরকার যত খাতে রাজস্ব আয় করবে, তার একটা অংশ আমাদের দেবে—এ রকম আইন আছে, কিন্তু সেই আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি, আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি বলেছি। কিন্তু এখনো কোনো ফল পাইনি।

প্রথম আলো: এই এক বছরে আপনি কী কী কাজ করেছেন?

সাঈদ খোকন: প্রায় ৩০০টি রাস্তা, ফুটপাত, নদর্মার উন্নয়নকাজ চলছে। এ ছাড়া আমরা হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে দুটো আধুনিক স্লটারহাউস করতে চাই, যাতে করে একটা নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে গবাদিপশু জবাই করা হয়। এ দুটো প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে গেছে। আমাদের ২১টি পার্ক ও ১২টা খেলার মাঠ আছে, সেগুলোর কিছু বেদখল হয়ে গেছে, কিছু খেলাধুলা ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই পার্ক ও খেলার মাঠগুলো উন্নয়ন-সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ড্রয়িং-ডিজাইনিংয়ের কাজ চলছে। শিগগিরই পার্কগুলোর উন্নয়নকাজ শুরু হবে।

প্রথম আলো: শাহবাগে শিশুপার্কের অবস্থা তো ভালো নয়। সেটার জন্য কিছু করছেন না?

সাঈদ খোকন: শাহবাগে শিশুপার্ক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটা প্রকল্প আছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশটার কাজ করছে ওই মন্ত্রণালয়, সঙ্গের শিশুপার্কটির উন্নয়ন করব আমরা। এটার নকশা তৈরির কাজ চলছে।

প্রথম আলো: আর কী কাজ করেছেন?

সাঈদ খোকন: রাস্তাঘাটে আলোর সমস্যা দূর করছি। এলইডি লাইট লাগানো শুরু করেছি। মূল রাস্তাগুলোর ৪০ শতাংশের কাজ মে মাসের মধ্যে শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। একটা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ গড়ে তোলা হচ্ছে।

প্রথম আলো: নগরের পাড়ামহল্লার রাস্তাগুলো বানানোর কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙেচুরে যায়। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ আছে, আছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। এ ব্যাপারে আপনি কি অবগত?

সাঈদ খোকন: এসব ব্যাপারে আমরা একটা মনিটরিং সেল ইতিমধ্যে গঠন করেছি। নজরদারি করার জন্য ইতিমধ্যে লোক দিয়েছি। যেখান থেকে অভিযোগ আসবে, সেখানে আমরা লোক পাঠিয়ে দেব। ঠিকাদারদের পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছি, কাজের মান খারাপ হলে ইউ আর ফিনিশড।

প্রথম আলো: সিটি করপোরেশনে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। দুর্নীতি দূর করার জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

সাঈদ খোকন: আমরা ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই, এসব বরদাশত করা হবে না। আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন, আমরা অনেক অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছি। সেগুলো করতে গিয়ে অনেক সময় আমার নিজের দলের লোকজন মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন।

প্রথম আলো: মতিঝিল এজিবি কলোনিতে রাস্তার ওপর বাজার বসানো হয়েছে, আপনার দলের লোকজনই সেটা করেছেন।

সাঈদ খোকন: ওটা নিয়ে আইনগত জটিলতা আছে। হাইকোর্টের একটা নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে আগের আমলের প্রশাসক মার্কেট বরাদ্দ দিয়ে গেছেন। এখন হাইকোর্ট আরেকটা নির্দেশনা দিয়েছেন অবৈধ অংশটা উচ্ছেদ করতে, পুরোটা নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অবৈধ অংশটা কোনটা।

প্রথম আলো: ফুটপাতগুলো বেদখল হয়ে গেছে, মানুষ হাঁটাচলা করতে পারে না। আপনি কী করেছেন?

সাঈদ খোকন: কীভাবে করব, বলেন? আমরা সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলেই আবার তারা বসে যায়, তাদের বসিয়ে দেওয়া হয়।

প্রথম আলো: কারা বসিয়ে দেয়?

সাঈদ খোকন: অসৎ পুলিশ কর্মকর্তারা...

প্রথম আলো: আপনি নিজেই তো হকারদের বসতে বলেছেন।

সাঈদ খোকন: ফুটপাতে, রাস্তায় নয়। ফুটপাতে তারা থাকবে, রাস্তাটা জনসাধারণকে ছেড়ে দেবে। পুনর্বাসনের বিকল্প ব্যবস্থা করার পরে আমরা তাদের ফুটপাত থেকেও সরে যেতে বলব।

প্রথম আলো: পানি, গ্যাস ইত্যাদির সরবরাহ লাইনে খোঁড়াখুঁড়ি, নালা-নর্দমার কাজ—এসব সারা বছর চলতেই থাকে। কোনো সমন্বয় নেই। এ ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?

সাঈদ খোকন: একটা অভিন্ন ইউটিলিটি ডাক্ট টানেল নির্মাণ করার জন্য আমরা একটা ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) কল করেছি। আমরা একটা ডাক্ট টানেল তৈরি করব, যেটার ভেতর দিয়ে ইউটিলিটির লাইনগুলো যাবে। এটা অনেক বড় একটা প্রকল্প হবে।

প্রথম আলো: আপনি নগরবাসীর জন্য বিশেষ কিছু বলতে চান?

সাঈদ খোকন: একটা বছর মাত্র হয়েছে। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশা করি কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারব।