ফেনীতে দুই হাজারীর লড়াই

ফেনীর সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত জয়নাল হাজারী। ২০০৪ সালে নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না। তবে এবার সংসদ নির্বাচন নিয়ে আবার দৃশ্যপটে হাজির হয়েছেন। ফেনীর তিনটি আসনে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন। আর এতে বিরোধ তৈরি হয়েছে তাঁর এক সময়কার সহযোগী ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নিজাম হাজারীর সঙ্গে।
একসময়ের গুরু-শিষ্য পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী বনে গেছেন এখন। দুই হাজারীর লড়াই এখন ফেনীর বাসিন্দাদের আলোচনার বিষয়।
জয়নাল হাজারী ও নিজাম হাজারী দুজনই ফেনীর সদর আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবার। জয়নাল হাজারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নিজাম হাজারী। ফেনী সদর (ফেনী-২) আসন ছাড়াও ফেনী ১ ও ফেনী ৩ আসনেও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জয়নাল হাজারী। গত সোমবার ফেনীর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. হুমায়ুন কবিরের কাছে জয়নাল হাজারীর পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। জয়নাল হাজারী ছাড়াও ফেনীর তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ফেনী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী সদর আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সে সময় ফেনী পরিণত হয় সন্ত্রাসের জনপদে। ৯৬-২০০১ সালে ফেনীতে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী মারা যান। অনুগত কর্মীদের নিয়ে তিনি তৈরি করেন ক্লাস কমিটি নামের সন্ত্রাসী বাহিনী।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে যৌথ বাহিনী তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
২০০৪ সালের এপ্রিলে জয়নাল হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তারপরও ফেনী আওয়ামী লীগের ওপর তাঁর প্রভাব থেকে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিজাম হাজারীর সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় জয়নাল হাজারীর। জয়নাল হাজারীর বিতর্কিত সন্ত্রাসী বাহিনী ক্লাস কমিটির বেশির ভাগ সদস্য নিজাম হাজারীর দলে যোগ দিলে জয়নাল তাঁর প্রভাব হারান। ফেনী শহর ছেড়ে বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন। তবে মাঝেমধ্যে ফেনীতে আসেন।
সদর আসনে জয়নাল হাজারীর প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজাম হাজারী বলেন, ‘নির্বাচনে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। তবে, ফেনীকে বহু কষ্টে সন্ত্রাসমুক্ত করা হয়েছে। ফেনীতে আর কাউকে সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না। মানুষের লাশের ওপর দিয়ে রাজনীতি করতে দেব না।’
তিনটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল হাজারীকে বারবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ফেনীর প্রবীণ দুই আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, জয়নাল হাজারী সব সময় আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর পক্ষে তিনটি আসনে নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আলোচনায় থাকার জন্যই তিনি এমনটি করতে পারেন।’