কাজের সুযোগই গরিব মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে

আহমেদ মুশফিক মোবারক যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক
আহমেদ মুশফিক মোবারক যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক

উত্তরাঞ্চলের অনেক অনুন্নত এলাকার গরিব মানুষকে কর্মের অভাবকালীন তিন মাস (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) কাজের সুযোগ দিলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিসহ জীবনমানের উন্নতি হয়। এক গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই সময়ে ওই সব এলাকার গরিব মানুষের কাজের সুযোগ কম থাকে। দেশের অন্য জেলায় যেখানে কাজের সুযোগ রয়েছে, সেখানে গরিব মানুষকে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
এ গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল
অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক। গতকাল শনিবার তিনি প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় এ গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। গত শুক্রবার মুশফিক মোবারক চার দিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন।
মুশফিক মোবারক ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের এ গবেষণাটি করেন। এ গবেষণায় তিনি তিন ধরনের গ্রাম বেছে নিয়েছেন। কিছু গ্রামের পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যকে ৮০০ টাকা অনুদান দিয়ে ঢাকা, বগুড়া ও টাঙ্গাইল শহরে কর্মসংস্থানের সুযোগের তথ্য দেওয়া হয়। আবার কিছু গ্রামের পরিবারের সদস্যকে ৮০০ টাকা ঋণ দিয়ে একই তথ্য দেওয়া হয়। কিছু গ্রামের সদস্যকে শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগের তথ্য দেওয়া হয়। সেই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে মুশফিক মোবারক বলেন, ঋণ ও অনুদান পাওয়া সদস্যদের মধ্যে ৫৬ থেকে ৫৯ শতাংশ কাজের জন্য শহরে আসেন। ফলে তাঁদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। আগে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা দৈনিক ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ক্যালরির খাদ্য গ্রহণ করতেন। কাজ পাওয়ার পর তাঁরা ২ হাজার ক্যালরির মতো খাদ্য গ্রহণ করেন। শুধু তথ্য পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ শহরে আসেন; আগেও একই হারে সেই গ্রামের সদস্যরা শহরে কাজের জন্য আসতেন। তিনি বলেন, ঋণ বা অনুদান পাওয়ায় গরিব মানুষ পরের বছরগুলোতেও কাজের জন্য শহরে এসেছিলেন। ৭৫ শতাংশই তিন বছর ধরে একই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করছেন।

ইন্দোনেশিয়ার পিছিয়ে পড়া অঞ্চলেও এ ধরনের গবেষণা শুরু করেছেন মুশফিক মোবারক। এ ছাড়া চীন ও ঘানায় এ ধরনের গবেষণার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি নিয়ে মুশফিক মোবারক বলেন, এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। সে সময় এ খাতের একটি গবেষণার ফল তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে এতে গরিব নারীদের কাজ বন্ধ হবে। শিক্ষার সুযোগ বন্ধ হবে এবং বাল্যবিবাহ বেড়ে যাবে। পরে ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে।

এক প্রশ্নের জবাবে নিজের আরেকটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে মুশফিক মোবারক বলেন, ব্যবসায়ীদের সামাজিক সম্মান বৃদ্ধির স্বীকৃতি দিলে তাঁদের কাছ থেকে কর আদায় বাড়ে।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। এতে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।