অস্ত্রোপচার বন্ধ এক মাস

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের কয়েকটি পদ শূন্য থাকায় অস্ত্রোপচার কার্যক্রম এক মাস ধরে বন্ধ আছে। এ ছাড়া অন্যান্য লোকবলসংকটের কারণে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে রোগীদের খাবার রান্না ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করছেন দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আফতাবউদ্দিন বলেন, হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য সহকারীর ১৫টি, এমএলএসএসের দুটি, কুক/মশালচির (বাবুর্চি) দুটি, নিরাপত্তা প্রহরীর দুটি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর একটি পদ শূন্য রয়েছে। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) পদটি গত ৩০ আগস্ট, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) পদটি ২৬ আগস্ট ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) পদটি ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শূন্য আছে। এতে অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ আছে। মূলত জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) বদলি হয়ে যাওয়ায় ২৬ আগস্ট থেকে অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে রোগীদের খাবারের রান্নাঘর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টারের ৪০টি চুলার জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে আবেদন জানিয়েও গ্যাস-সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আফতাবউদ্দিন বলেন, বাবুর্চি পদ ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শূন্য থাকায় প্রথমে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীদের অনুরোধ করা হয়েছিল তাঁদের কাজের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রোগীদের খাবার রান্না করে দেওয়ার জন্য। কেউ রাজি না হওয়ায় দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে অনুরোধ করা হয়। পরে জেলা সিভিল সার্জনের অনুমতি নিয়ে তাঁদের দিয়ে রোগীদের খাবার রান্না করানো শুরু হয়। 

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের রোগীদের খাবার রান্না হয় যে ঘরে, সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী খলিলুর রহমান ও সখিনা বেগম মুরগি, ডাল, ভাত রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গ্যাস-সংযোগ না থাকায় কাঠ, লাকড়ি দিয়েই তাঁদের রান্না করতে হয়। লাকড়ির ধোঁয়ায় রান্নাঘরের দেয়াল কালো হয়ে গেছে। জানালা দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকলেও রান্নাঘরটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। রান্নাঘরের অর্ধেক জুড়ে লাকড়ির স্তূপ।

খলিলুর রহমান ও সখিনা বেগম জানান, তাঁরা সকালে হাসপাতালে এসে প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। পরে রোগীদের জন্য ঠিকাদারের সরবরাহ করা কাঁচামাল দিয়ে রান্না করে তা রোগীদের পৌঁছে দেন। হাসপাতালের রান্নার লোক না থাকায় দরিদ্র রোগীদের কথা চিন্তা করে তাঁরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রান্নার কাজ করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে উপজেলার নবীগঞ্জে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩১ শয্যা থেকে ২০১৩ সালে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। উপজেলার দরিদ্র লোকজন চিকিৎসার জন্য এই সরকারি হাসপাতালে আসেন। যাঁরা সচ্ছল, তাঁদের বেশির ভাগ বন্দর উপজেলার পার্শ্ববর্তী শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে নগরীর দুটি বৃহৎ সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন আশুতোষ বলেন, ‘বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে চিকিৎসকেরা রোগীদের অপারেশন করতেন, তাঁদের পদোন্নতি হওয়ায় তাঁরা এখান থেকে বদলি হয়ে গেছেন। সে কারণে অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত চিকিৎসকদের এখানে পোস্টিং (পদায়ন) করা হবে।’