শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থেও বসেছে কর

বাজেটছবি: প্রথম আলো

কোম্পানির মুনাফার ক্ষুদ্র অংশ তিনটি তহবিলের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওয়ার সুযোগ আছে। সেই তহবিলের অর্থের ওপরও এবার ১০ শতাংশ কর বসিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থ উপদেষ্টা তাঁর আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে বলেন, অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে কোনো সুবিধাভোগীকে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ১০ শতাংশ হারে কর কর্তন করবেন। অর্থাৎ একজন শ্রমিক কোনো একটি তহবিল থেকে এক লাখ টাকা উত্তোলন করতে গেলে এখন পাবেন ৯০ হাজার টাকা। বাকি ১০ হাজার টাকা কর বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে।

কোম্পানির নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ ৮০: ১০: ১০ অনুপাতে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে অংশগ্রহণ তহবিল থেকে শ্রমিক-কর্মচারীরা সরাসরি অর্থ সহায়তা পান। কল্যাণ তহবিল কোম্পানির ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকেরা চিকিৎসা ও তাঁদের সন্তানেরা শিক্ষা অনুদান পেয়ে থাকেন।

শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থের ওপর কর বসানো দ্বৈত করারোপ বলে উল্লেখ করেন শ্রম আইনবিশেষজ্ঞ জাফরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর দেওয়ার পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে অর্থ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া শ্রম আইনে এসব তহবিলের অর্থ আয়করমুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। তারপরও নতুন করে এ ধরনের তহবিলে করারোপ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁদের প্রয়োজন মিটবে না।

এদিকে শ্রমিকের পাওনার ওপর করের প্রস্তাব রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট থেকে শ্রমিকদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলেও কিছু নেই। ফলে শ্রমিকের তহবিলের ওপর করের প্রস্তাব করা গর্হিত অপরাধ। কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে নিজের ক্যানসার কিংবা জটিল রোগের চিকিৎসা, শিশুর চিকিৎসার জন্য সহায়তা পান শ্রমিকেরা। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছ থেকে রাষ্ট্র কর নিতে পারে না। তাই বাজেট পাসের আগে এ বিধান বাতিল করতে হবে।