বাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো বড় দরপতন

শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

আগের দিনের ধারাবাহিকতায় দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল সোমবারও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। তবে পতনের তীব্রতা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল দিন শেষে ৮০ বা প্রায় দেড় শতাংশ কমেছে। আগের দিন এই সূচকটি ১১৮ পয়েন্ট বা ২ শতাংশের বেশি কমেছিল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি সোমবার ২০২ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ কমেছে। সিএসইর এই সূচকটি রোববার এক দিনে ৪১১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমেছিল। তবে লেনদেনে দুই বাজারে ছিল দুই রকম অবস্থা। ডিএসইতে লেনদেন কমলেও বেড়েছে চট্টগ্রামের বাজারে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোববার ঘোষিত মুদ্রানীতির প্রভাবেই মূলত বাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা দিয়েছে। মুদ্রানীতির তাৎক্ষণিক প্রভাবে রোববারই বড় দরপতন ঘটেছিল। মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে গভর্নর ফজলে কবির শেয়ারবাজার বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন। এ সময় তিনি শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ওপর নজরদারি বাড়ানোর কথাও বলেন। স্মরণ করিয়ে দেন ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের কথাও। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার সুস্থ ধারায় না থাকলে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাজার যেভাবে তেজি হয়ে উঠেছিল, সেটির লাগাম টানতে একধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে। যাতে করে বাজারের উত্থান নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।
মোহাম্মদ হেলাল আরও বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ও ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে ঢুকছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের রুটিন কাজেরই অংশ। তবে সেটিকে গভর্নর প্রকাশ্যে বলায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ভর করেছে। যদিও এ ধরনের আতঙ্কের যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক মনে করেন, দরপতনের এ ধারা স্থায়ী হবে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বক্তব্য এসেছে, তাতে মনে হয় না এ পর্যায়ে এসে বাজারে একটানা দরপতন কারও কাম্য। বরং সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা রয়েছে বাজারটি সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা। তাই বাজারে তেজিভাব অস্বাভাবিক হলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণের কিছুটা চেষ্টা করা হয়। এতে বিনিয়োগকারীর ভীত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আপাতত আমার মনে হয় না।’
ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে প্রথম দুই ঘণ্টা সূচকের বেশ ওঠা-নামা ছিল। বেলা একটার পর থেকে সূচক ক্রমেই কমতে শুরু করে। ফলে দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমে নেমে আসে ৫ হাজার ৪২১ পয়েন্টে।
মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকালের সূচকের পতনের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্যাংক খাতের। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। এদিন গড়ে প্রতিটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ করে কমেছে। খাত হিসেবে সর্বোচ্চ দরপতন হলেও লেনদেনে আধিপত্য ছিল ব্যাংক খাতেরই। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশের বেশি ছিল এ খাতের।
ডিএসইতে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬২ কোটি টাকা বা সাড়ে ৫ শতাংশ কম। এদিন ঢাকার বাজারে লেনদেন ও দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি বারাকা পাওয়ার। এককভাবে কোম্পানিটির ৪৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকায়। রোববার ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো। গতকাল সেটি নেমে গেছে চতুর্থ অবস্থানে।
চট্টগ্রামের বাজারের সার্বিক মূল্যসূচকটি গতকাল দিন শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮৫ পয়েন্টে। আর লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৪ কোটি টাকা বেশি।