এক বছরেই ফারমার্স ব্যাংকে ১৯টি বিশেষ পরিদর্শন

এক বছরেই ফারমার্স ব্যাংকে ১৯টি বিশেষ পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে উঠে এসেছে নতুন এ ব্যাংকটির নানা অনিয়মের চিত্র। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তফসিলি বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৮৫টি বিশেষ পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ পরিদর্শন পরিচালনা করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন ফারমার্স ব্যাংকে। নতুন এ ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালে।
এর বাইরে গত অর্থবছরে ন্যাশনাল ব্যাংকে ৮টি, অগ্রণী ব্যাংকে ৬টি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৪টি বিশেষ পরিদর্শন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে এই তিন ব্যাংকেও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্র্যাক ও সাউথইস্ট ব্যাংকে ৪টি করে বিশেষ পরিদর্শন করেছে। বিশেষ এসব পরিদর্শনে ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের জালিয়াতি ও অনিয়মের ঘটনা উদ্ঘাটন করা হয়। গ্রাহকদের অভিযোগ ও ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোতে সময়-সময় নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে যখনই বড় ধরনের অনিয়মের তথ্য মেলে, তখনই বিশেষ পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কিছু অনিয়মের তথ্য পায় গোপন সূত্র থেকে ও কিছু আসে অভিযোগ থেকে। তবে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরই বিশেষ পরিদর্শন পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে সাধারণ ব্যাংকিং-সংক্রান্ত অভিযোগ ১ হাজার ৫৬২টি, ঋণ ও অগ্রিম-সংক্রান্ত ৭৪২টি, কার্ড-সংক্রান্ত ৩০৩টি, বৈদেশিক বিল-সংক্রান্ত ২৯২টি, স্থানীয় বিল-সংক্রান্ত ২০৪টি, রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত ১৮৪টি, মোবাইল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত ১১৪টি, ট্রেড বিল-সংক্রান্ত ৩১টি, ব্যাংক গ্যারান্টি-সংক্রান্ত ১১৪টি ও অন্যান্য অভিযোগ ৯৮৪টি। অভিযোগগুলোর সবই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যেসব অভিযোগের বিষয়ে আদালতে মামলা রয়েছে, সেগুলো কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই নিষ্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক নিয়ে। ব্যাংকটিকে নিয়ে ৫৬৩টি অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক নিয়ে ৩৭৩টি ও অগ্রণী ব্যাংক নিয়ে ২৯১টি, ইসলামী ব্যাংক নিয়ে ২৬৮টি, জনতা ব্যাংক নিয়ে ২৩১টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক নিয়ে ২০৪টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নিয়ে ১৮৪টি, পূবালী ব্যাংক নিয়ে ১৩২টি, রূপালী ব্যাংক নিয়ে ১৩১ ও ইস্টার্ণ ব্যাংক নিয়ে ১২৬টি অভিযোগ দিয়েছেন গ্রাহকেরা।
এর বাইরে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব অভিযোগ সেলে আসা অভিযোগের সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ওই সময়ে ৫ হাজার ৮৯৬ অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৮টি। সিটি ব্যাংকের ২ হাজার ৪৪০ অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৬২০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ইস্টার্ণ ব্যাংকের ১ হাজার ৫৬২ অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৫৫৬টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এইচএসবিসির ৯৯৫টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬০১টি, ডাচ্-বাংলার ২৮১টির মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৪৫টি। ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৯২টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৪৫টি, ব্র্যাক ব্যাংকের ১৬৭টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৮টি, জনতা ব্যাংকের ১৫৬টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৮টি, কৃষি ব্যাংকের ১৫৪টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩২টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের (এফআইসিএসডি) কার্যক্রমের ওপর প্রণীত বার্ষিক এই প্রতিবেদনটির গতকাল মঙ্গলবার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর ফজলে কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এফআইসিএসডির মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাদ হোসেন। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে বক্তব্য দেন শারমীন আহমেদ ও অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে আলমগীর হোসেন।
ব্যাংকের নাম বিশেষ পরিদর্শনের সংখ্যা
ফারমার্স ব্যাংক ১৯
ন্যাশনাল ব্যাংক ০৮
অগ্রণী ব্যাংক ০৬
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ০৪
ব্র্যাক ব্যাংক ০৪
সাউথইস্ট ব্যাংক ০৪
সময়কাল: ২০১৫–১৬ অর্থবছর