এফবিসিসিআই নির্বাচন দুই মাসের জন্য স্থগিত

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) ২০১৭-১৯ মেয়াদের নির্বাচন দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।
আগামী ১৪ মে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। ওই নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আমিনুল হক। তিনি মনোনীত পরিচালক হিসেবে ময়মনসিংহ চেম্বারের অন্তর্ভুক্তি দাবি করেছিলেন, যার মাধ্যমে বড় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে মনোনীত একজন ব্যবসায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হতে পারেন।
আমিনুল হকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনে আছে যে প্রতিটি বিভাগ থেকে মনোনীত পরিচালকের নাম পাঠানো হবে। ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ বিভাগ হয়। ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য দরখাস্ত করেছিল। কিন্তু গত এক বছরে কিছু হয়নি। এফবিসিসিআই নির্বাচনের তফসিলের আগে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। আদালত এই মর্মে নির্দেশও দেন। পাশাপাশি আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
বদরুদ্দোজা বলেন, ইতিমধ্যে বাণিজ্যসচিব জানান যে তফসিল হয়ে গেছে। অন্তর্ভুক্তির বিবেচনার সুযোগ নেই। সবশেষ ১৪ মার্চও একই কথা জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে স্থগিতাদেশ দেন আদালত।
এদিকে এই স্থগিতাদেশ নিয়ে জানতে এফবিসিসিআই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত একমাত্র সভাপতি পদপ্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা চাই সঠিক সময়ে নির্বাচন। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে কি না, পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, এফবিসিসিআই এই রিটের কোনো পক্ষ নয়। আপিল করতে হলে সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করবে।
এফবিসিসিআই দেশের এলাকাভিত্তিক চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনগুলোর ফেডারেশন। এর পরিচালক পদের সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে ২০টি পরিচালক পদ দেশের প্রধান প্রধান ২০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য সংরক্ষিত থাকে। অন্যদিকে ৩০টি পরিচালক পদে সরাসরি ভোট দিতে পারেন ভোটাররা।
এদিকে নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সাবেক প্রথম সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে আরেক প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতি হতে বিশেষ কোনো বাধা নেই।
শফিউল ইসলাম দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সহসভাপতি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে আলোচনা, তাতে জসিম উদ্দিন আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যা আছে। আমরা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আরও ভালো কিছু করতে পারব।’
এফবিসিসিআই সূত্র জানিয়েছে, জসিম উদ্দিন সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সরকারের সমর্থন না পেয়ে। এর আগে দুজন ব্যবসায়ী নেতাই সরকারের সমর্থন পেতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত সফল হন শফিউল ইসলাম।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জসিম উদ্দিনের সমর্থক একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে জসিমকে আগামীবার নির্বাচন করতে বলা হয়। যদিও আগামীবার সভাপতি হবেন চেম্বার থেকে। ফলে প্লাস্টিক খাত থেকে মনোনীত পরিচালক হয়ে আসা জসিম উদ্দিনের সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তবে জসিমকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিতে আইনে সংশোধন আনার আশ্বাস সরকার দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওই ব্যবসায়ী নেতা।
সভাপতি পদে সমঝোতা হওয়ার পর শফিউল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন পক্ষের মধ্যে পরিচালক পদ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনা সফল হলে দুই পক্ষ মিলে একক প্যানেল দিতে পারে। এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। হলে একসঙ্গে কাজ করব।’